ছেলে, নাকি মেয়ে হবে সে?

আরিফুল ইসলাম অর্ণবের পরিবেশনা। ছবি: মেহেদি হাসান ইমন
আরিফুল ইসলাম অর্ণবের পরিবেশনা। ছবি: মেহেদি হাসান ইমন

ছেলে, নাকি মেয়ে হবে সে? সেই দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে পুরুষ শরীরের মেয়েটি। দ্বৈতসত্তার একজন মানুষের পরিচয়সংকটের এ গল্প ভীষণ অস্বস্তিকর। বদ্ধ কোনো সমাজে এ গল্প বলা যায় না। কিন্তু গল্পটি বলতেই হবে তাঁকে; ছেলেটিকে কিংবা ছেলের শরীরধারী মেয়েটিকে।

আরিফুল ইসলাম অর্ণবের পরিবেশনা। ছবি: মেহেদি হাসান ইমন
আরিফুল ইসলাম অর্ণবের পরিবেশনা। ছবি: মেহেদি হাসান ইমন

কথায় নয়, এ গল্প বলতে হবে অন্য কোনো ভাষায়। যে ভাষায় তাঁর কাহিনি বোঝা যাবে, কিন্তু অস্বস্তিটুকু ছড়িয়ে পড়বে না। কেউ কেউ হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে তাঁকে। আয়নায় দাঁড়িয়ে তাঁর টিপ পরতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সেটা পরে জনসমক্ষে যাওয়া চলে না। সমাজ চায় পুরুষের দেহ গড়ন নিয়ে যে জন্মেছে, সে পুরুষের মতোই থাকুক। তাঁকে পুরুষ হয়েই বাঁচতে হবে। সে চেষ্টা করে পুরুষের ভঙ্গিগুলো নকল করতে, পারে না। শরীরের ভেতরের নারীটিই বারবার জেগে ওঠে। নারীর মতো মমতায় জড়াতে চায় জগৎকে। দ্বৈতসত্তার যন্ত্রণা সহ্য করা অসহনীয় হয়ে পড়ে বৃহন্নলা সেই মানুষটির জন্য।

আরিফুল ইসলাম অর্ণবের পরিবেশনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
আরিফুল ইসলাম অর্ণবের পরিবেশনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংকটপূর্ণ এ গল্পকে অন্য এক ভাষায় উপস্থাপন করেছেন নৃত্যশিল্পী আরিফুল ইসলাম অর্ণব। সমসাময়িক নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা তাঁর এ গল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মানুষ’। এ নৃত্যকথার কোরিওগ্রাফার শিল্পী নিজেই। আর এতে তাঁর নৃত্যসহযোগী হিসেবে ছিলেন রেজওয়ান পারভেজ এবং মারিয়া ফারিহ উপমা। সংগীত পরিচালনা করেছেন আনুশেহ আনাদিল, সংগীত মিশ্রণ বুনো। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে গতকাল শুরু হওয়া দুই দিনের সমসাময়িক নৃত্য উৎসবের তৃতীয় পরিবেশনা ছিল এটি। মিলনায়তনপূর্ণ দর্শক বিপুল করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে শিল্পীকে। এ করতালি সমসাময়িক নৃত্যের জন্য অভিবাদন। নৃত্যের ভাষায় যে গল্প দর্শকের কাছে পৌঁছেছে, সেটি এ ঘরানার তরুণ শিল্পীদের জন্য সত্যিকারের অনুপ্রেরণা।

আনন্দিতা খান পরিবেশন করেন ‘রিফিউজিস’। ছবি: সাইফুল ইসলাম
আনন্দিতা খান পরিবেশন করেন ‘রিফিউজিস’। ছবি: সাইফুল ইসলাম

সমসাময়িক নৃত্য উৎসবের প্রথম পরিবেশনা ছিল মেহরাজ হক তুষারের ‘ট্রাস্ট’। এ কোরিওগ্রাফিতে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা, স্নাতা শাহরিন, এস এম হাসান ইশতিয়াক ইমরান, মারিয়া ফারিহ উপমা, সাইফুল ইসলাম ইভান, রাসেল আহমেদ, মনির হোসেন, লতা মণ্ডল, আননূর খান নোলক, রবিন খান, শফিক ইসলাম ও মো. জুয়েল।

মেহরাজ হক তুষার ও তাঁর দল। ছবি: রাজিব হালদার
মেহরাজ হক তুষার ও তাঁর দল। ছবি: রাজিব হালদার

সহযোগীদের নিয়ে পারভিন সুলতানা কলি পরিবেশন করেন ‘ইমপ্রিজনড ফ্রিডম’, মৌমিতা রায় জয়া পরিবেশন করেন ‘আ কজ অব কনফ্লিক্ট ইন কালচার’ এবং আনন্দিতা খান পরিবেশন করেন ‘রিফিউজিস’। জার্মানির সমকালীন নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার টমাস বুঞ্জারের সঙ্গে কর্মশালার মাধ্যমে বাংলাদেশের ১১ জন সমকালীন তরুণ নৃত্যশিল্পীকে এ উৎসবের জন্য বাছাই করা হয়েছে।

আরিফুল ইসলাম অর্ণবের পরিবেশনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
আরিফুল ইসলাম অর্ণবের পরিবেশনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

আজ বুধবার উৎসবের শেষ দিন। সন্ধ্যা ৭টায় ছয়টি কোরিওগ্রাফি নিয়ে মঞ্চে উঠবেন সমসাময়িক নৃত্যের তরুণ শিল্পীরা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এ উৎসবের আয়োজন করেছে গ্যোটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ।

তাহনুন আহমেদী ও মৌমিতা রায় জয়ার পরিবেশনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
তাহনুন আহমেদী ও মৌমিতা রায় জয়ার পরিবেশনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম