শেষ ছবি শেষ করা হলো না

সাইদুল আনাম টুটুল (১৯৫০—২০১৮)
সাইদুল আনাম টুটুল (১৯৫০—২০১৮)
>
নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সম্পাদক সাইদুল আনাম টুটুলের মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে শোক নেমে এসেছে। অনেকেই এসেছিলেন হাসপাতালে তাঁর স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। সাইদুল আনামের কাছের পাঁচজন সংস্কৃতিজনের মন্তব্য তুলে ধরা হলো এখানে।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ
নাসির উদ্দীন ইউসুফ


আধুনিক ও নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তাঁর
নাসির উদ্দীন ইউসুফ, নাট্য ব্যক্তিত্ব
সাইদুল আনাম টুটুলের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই। কিন্তু আমরা সবাই জানি, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর নাম যেন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ওঠে, আমি আর টুটুল মিলে এ বিষয়ে কাজ করছিলাম। কিন্তু একজন কমান্ডার আর দুজন সাক্ষীর খোঁজ করা আর হলো না। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের খাতায় তাঁর নাম আছে। রেশন নেওয়া, খাবার নেওয়া, অস্ত্র নেওয়ার তথ্য তো রয়েছেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো তিনি ভিড়ে গেলেন মুস্তাফা মনোয়ারের সঙ্গে। পাপেট শো করে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি করার কাজটি করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে আমরা যখন ঢাকা থিয়েটারের হয়ে সংবাদ কার্টুন আর সম্রাট ও প্রতিদ্বন্দ্বীগণ নাটক দুটি করি, তখন তিনি তাতে অভিনয় করেছিলেন। মুনতাসীর ফ্যান্টাসিতেও তিনি অভিনয় করেছেন। পরে তিনি চলে গেলেন ভারতের পুনেতে। ফিরে এলেন চলচ্চিত্র সম্পাদক হিসেবে। নাটকের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও অসাধারণ সব কাজ করেছেন চলচ্চিত্র আর নাটক নিয়ে। আধুনিক ও নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তাঁর। তাঁর নিজের পরিচালনায় আধিয়ার ছবিটি ছিল অসাধারণ। চলচ্চিত্রবিষয়ক যেকোনো আলোচনায় সে ছবির কথা উঠে আসে। টুটুলের মতো প্রতিভাবান শিল্পী যদি আরও সুযোগ পেতেন, তাহলে উপকৃত হতো আমাদের দেশ। ১৯৫০ সালে আমাদের দুজনেরই জন্ম। টুটুল আগে চলে গেলেন।

ফরিদুর রেজা সাগর
ফরিদুর রেজা সাগর


তাঁর মনে অনেক অভিমান ছিল
ফরিদুর রেজা সাগর, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
খুব অভিমান করে চলে গেলেন টুটুল ভাই। একটি ছবি করছিলেন তিনি। শেষ করে যেতে পারলেন না। অসুস্থ ছিলেন। আমি যখন তাঁর কথা ভাবি, তখন দেখতে পাই ডিআইটি চত্বরে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। টেলিভিশনে ছোটদের অনুষ্ঠান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে আবার টেলিভিশনে ছোটদের অনুষ্ঠান করেছেন। তাঁর মনে অনেক অভিমান ছিল। আরও অনেক কাজ করতে পারতেন টুটুল ভাই। কিন্তু সেই সুযোগ পেলেন না তিনি।


তিনি আমার গাইড হিসেবে কাজ করেছেন

মোরশেদুল ইসলাম
মোরশেদুল ইসলাম


মোরশেদুল ইসলাম, চলচ্চিত্র নির্মাতা
টুটুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক। আমার প্রথম ছবি আগামীর কাজ করতে গিয়ে। প্রথম ছবি করার সময় আমার তো অভিজ্ঞতাই ছিল না। সে সময় আগামীর শুধু সম্পাদনাই নয়, তিনি আমার গাইড হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর আমার দীপু নাম্বার টু, দুখাই ছবিরও সম্পাদক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অনেক ছবিরই সম্পাদক ছিলেন তিনি। অসংখ্য গুণগত মানে উত্তীর্ণ টেলিনাটক, যেমন সেকু সেকান্দর, সুখের নোঙ্গর, নাল পিরান তিনি করেছেন। ২০০৩ সালে তাঁর পরিচালনায় আধিয়ার ছবিটি ছিল প্রশংসিত। দ্বিতীয় ছবির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে টুটুল ভাইকে। তবে অসুস্থ শরীরেই তিনি দারুণ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ছবির কাজে।

গাজী রাকায়েত
গাজী রাকায়েত


এভাবে চলে যাবেন, ভাবতেও পারিনি
গাজী রাকায়েত, অভিনেতা, নাট্য নির্মাতা
টুটুল ভাই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, নাটক-সবকিছু মিলে অসাধারণ এক মেধাবী মানুষ। সম্প্রতি অনুদানে কালবেলা ছবিটি করছিলেন। আমি যতটুকু জানি, একটি গানের দৃশ্যই শুধু বাকি ছিল। বাদবাকি শুটিং শেষ। নিজের দ্বিতীয় ছবিটি শেষ করতে পারলেন না টুটুল ভাই। তিনি ছিলেন অসাধারণ অভিনেতা, সংগঠক, চলচ্চিত্র সম্পাদক। তাঁর চলে যাওয়া এক বিরাট ক্ষতি। এক সপ্তাহ আগে তাঁর ছবিটি নিয়ে কথা হচ্ছিল। এখনো মনে হয়, এই তো, টুটুল ভাই কাছেই বসে আছেন। কথা বলছেন আমার সঙ্গে। বলছেন তাঁর স্বপ্নের কথা। কিন্তু তিনি এভাবে চলে যাবেন, ভাবতেও পারিনি।

চম্পা
চম্পা


ব্যতিক্রমী কাজ করতে পারতেন

চম্পা, অভিনেত্রী
একটা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে পরিচয়। তখনই দেখেছি অত্যন্ত নম্র-ভদ্র খুব চুপচাপ টাইপের একজন মানুষ। তাঁর আধিয়ার ছবিতে কাজ করেছি। প্রত্যেক আর্টিস্টকেই তিনি খুব সম্মান করতেন। বিষয়টা খুব ভালো লেগেছে। আমার চরিত্রটি নিয়ে তিনি আলোচনা করতেন আমার সঙ্গে, যা আমাদের এখানে কম দেখা যায়। প্রতিটি কাজের যে একটা হোমওয়ার্ক থাকে, সেটা তিনি করতেন। ছবির দৃশ্যগুলো এত চমৎকার করে চিত্রায়িত করেছিলেন, আমার খুব ভালো লেগেছিল। ছবিটা ছিল সব ছবি থেকে আলাদা। তিনি একটু ব্যতিক্রমী কাজ করতে পারতেন।