'সিনেমা থেকেই আমার জন্ম'

শাকিব খান
শাকিব খান

বছরজুড়ে সামগ্রিকভাবে সিনেমার অবস্থা ভালো যায়নি। আর যাবেই–বা কেন? এই সিনেমার পেছনে একটি গোষ্ঠী দুই বছর ধরে যেভাবে লেগেছিল, তাতে সিনেমার দিনকাল ভালো যাওয়ার কোনো কারণও নেই।

আন্দোলনের নামে পদে পদে দলটি সিনেমাকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছে। শিল্পীদের ভেতর বিভেদ তৈরি করেছে। শিল্পীদের অপমান, অপদস্থ করেছে। এ ধরনের সংকটে পড়ে প্রযোজকদের অনেকেই এখান থেকে বেরিয়ে গেছেন। তাঁরা টাকা বিনিয়োগ করে অশান্তিতে থাকতে চাননি। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রযোজকেরা বিনিয়োগ করছেন না। তাতেই ছবির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমাদের সিনেমার এই দুরবস্থা চলচ্চিত্রের কিছু মানুষের অহেতুক আন্দোলনের ফল।

ছবি কমে যাওয়ার কারণে ইন্ডাস্ট্রির অনেক শিল্পী, কলাকুশলীও বসে আছেন। কাজ পাচ্ছেন না। অনেক কলাকুশলী পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছেন। দুঃখ লাগে, যখন দেখি শুটিং করতে গিয়ে অনিয়মের দোহাই তুলে পুলিশ দিয়ে শুটিং আটকে দেওয়া হয়। যৌথ প্রযোজনার ছবি দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা সিনেমা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেটাও আটকানো হয়েছে। এখন যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণেও কেউ আগ্রহী নন। আজ ভারতের দিকে তাকালে কী দেখা যায়, বলিউডে তারকার অভাব নেই। তাঁরা হলিউডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন। বলিউডের তারকারা হলিউডে গিয়ে কাজ করছেন। আর আমরা পদে পদে সিনেমাকে পিছিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। এই ভীতিকর অবস্থার কারণে কেউ বিনিয়োগ করছেন না। আগে তো ছোট ছোট বাজেটের সিনেমাও তৈরি হতো। সবাই টুকটাক কাজ করতেন। তার মধ্যে কিছু সিনেমা হিটও হয়েছে। এখন তো দেখি সাইমন, বাপ্পী, আরিফিন শুভদের হাতেও কাজ কমে গেছে।

আমার প্রশ্ন, যারা চলচ্চিত্রকে ঘিরে এই অশান্তি তৈরি করেছে, তাদের কী লাভ হয়েছে? এই দলটি তো সিনেমার সুদিন আনার স্বপ্ন দেখিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল। কোথায় সেই সুদিন? আমাদের চলচ্চিত্রের নতুন প্রজন্মের অনেকেই ছিলেন সেই আন্দোলনে। তাঁদের হাতেও তো কাজ নেই। তাঁরা নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পারছেন, চলচ্চিত্র নিয়ে নোংরামি করা ঠিক হয়নি। আমাকে বারবার আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি একাধিকবার বহিষ্কারও করা হয়েছে। কী লাভ হয়েছে তাঁদের? আমাকে কি আটকে রাখতে পেরেছেন তাঁরা। ছবির সংখ্যা কমে গেলেও আমার নিজের কাজের সংখ্যা কি কমেছে? অবশ্যই না। এই বছর আমি বাংলাদেশ ও কলকাতার বড় বড় ছবি দর্শকের উপহার দিয়েছি। বরং গত বছরের চেয়ে এই বছরে আমার ছবি মুক্তির সংখ্যা বেড়েছে। আমি এত বছর যুদ্ধ করেই এগিয়েছি। সিনেমা থেকেই আমার জন্ম। আমি সিনেমাকে ভালোবাসি। আর এত দিন ধরে আমি দর্শকের জন্যই কাজ করে গেছি।

কিন্তু এক শাকিব দিয়ে তো একটি দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি চলবে না। ইন্ডাস্ট্রির সবাইকে নিয়েই চলতে হবে। একটি দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে যত তারকা শিল্পী তৈরি হবে, সেই দেশের সিনেমা ততই বিকশিত হবে। তাই সবারই উচিত এই অঙ্গনটি যেন ভালো থাকে, সেই কাজ করা।

ভবিষ্যতে আরও বেশি বেশি ভালো সিনেমা তৈরি হোক। নতুন বছরে দেশে নতুন সরকার গঠন হবে। সিনেমাশিল্পকে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন সরকার এগিয়ে আসবে, সেই প্রত্যাশাই আমাদের।

লেখক: চিত্রনায়ক