আমার অভিনয়জীবনে দীপিকার অবদান অনেক বেশি: রণবীর সিং

বিয়ের আসের দীপিকা পাড়ুকোন ও রণবীর িসং
বিয়ের আসের দীপিকা পাড়ুকোন ও রণবীর িসং
বিয়ের ছুটি সেরে আবার পর্দায় ফিরলেন রণবীর সিং। মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত ছবি সিম্বা। আট বছরের এই ফিল্মি সফর থেকে দীপিকাকে বিয়ে, সবকিছু রণবীরের কাছে স্বপ্নের মতো। অকপটে নানা কথা বললেন বলিউডের এই দাপুটে অভিনেতা। মুম্বাইয়ের জুহুর এক পাঁচতারা হোটেলে রণবীর সিংয়ের মুখোমুখি প্রথম আলো

২০১৮ আপনার জন্য খুবই স্পেশাল। ‘পদ্মাবত’, বিয়ে, পুরস্কার জয়, এরপর ‘সিম্বা’। কেমন লাগছে?
সত্যি, দারুণ কাটল বছরটা। বছরের শুরুতেই পদ্মাবত মুক্তি পেয়েছিল। বাণিজ্যিকভাবে দারুণ সফলতা পেয়েছে ছবিটা। আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হিট ছবি। পদ্মাবত ৩০০ কোটির মতো ব্যবসা করেছিল। চিত্র সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছি। বলা যায়, সঞ্জয়লীলা বানসালির এই ছবি আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। তার ওপর জোয়া আখতারের গাল্লি বয় ছবিতে কাজের সুযোগ পেয়েছি। অভিনয়ের পাশাপাশি ছবিতে ‌র‌্যাপ গান করার সুযোগও পেয়েছি। সিম্বার মতো পুরোপুরি মসলাদার ছবিতেও এ বছরই কাজ করেছি। তার ওপর দীপিকাকে বিয়ে...এটা তো একটা স্বপ্নের মতো বিয়ে ছিল।

এই রকম একটা বিয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখনো?

একদমই না। আমার এই সফরই আমার কাছে স্বপ্নের মতো। আমার এখনো বিশ্বাস হয় না। দীপিকা সবকিছু খুব সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করেছে। ও সবকিছু সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলেছিল। দীপিকাই আমাকে স্বপ্নের মতো এই বিয়ে উপহার দিয়েছে। এই বিয়ের সব কৃতিত্ব আমি ওকে দিতে চাই। নভেম্বর জুড়ে শুধু বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সেই মাসটা আমি ভীষণভাবে উপভোগ করেছি। আমি দীপিকাকে বলি, এই বিয়ের স্বপ্ন আমি স্বপ্নেও দেখিনি। আর আমি মনে করি, বিয়ে এ রকমই হওয়া চাই।

বিয়ে আপনার জীবনে কতটা বদল এনেছে?

আমি এখন একটু বেশি সুশৃঙ্খল হয়েছি। সময় ব্যবস্থাপনায় আগের থেকে আরও ভালো হয়েছি। বিয়ের পর একটু দায়িত্বশীল হয়েছি। তবে আরও বেশি শৃঙ্খলায় আসতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনায় আরও মনোযোগ দিতে হবে। দীপিকা আমার এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখছে।

বিয়ের পর প্রথম পুরস্কার পেলেন। অনুভূতি কেমন ছিল?

উফ, দুর্দান্ত মুহূর্ত ছিল সেটা। আমি এ রকম একটা মুহূর্তের স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে বসে আছি। ‘সেরা অভিনেতা’ হিসেবে আমার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। আমি মঞ্চে উঠে পুরস্কার নিচ্ছি। এবার বাস্তবে ঠিক এ রকমই আমার সঙ্গে হলো। ‘সেরা অভিনেতা’ হিসেবে নিজের নাম শোনার পর আমি দীপিকাকে চুমু দিয়ে মঞ্চে পুরস্কার নিতে উঠি। এসে ওর হাতে ট্রফিটা তুলে দিই। দীপিকাও খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল সে সময়। আসলে আমি আর ও দুজনেই পদ্মাবত ছবিটার জন্য অনেক সংগ্রাম করেছি। আমরা একে অপরে এই সংগ্রামের সাক্ষী। আট বছর ধরে আমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। তার মধ্যে ছয় বছর ধরে আমি আর দীপিকা একে অপরের সঙ্গে আছি। গত ছয় বছরে আমার জীবনে যা যা সফলতা এসেছে, তা ওর জন্যই। ও–ই আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে মাটিতে পা রেখে চলতে হয়। আমার অভিনয়জীবনে দীপিকার অবদান অনেক বেশি।

বিয়ের পরপরই চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে ঢুকে পড়লেন...

সত্যি করে বলছি, সবার আশীর্বাদে আমি একটা দারুণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বিয়ের পরই সিম্বার মুক্তি। আমার বিশ্বাস, ২০১৯-ও আমার জন্য বিশেষ কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ওপর ৮৩ সিনেমাটার কাজ শুরু হবে সামনের বছর। করণ জোহরের অন্যতম বড় প্রজেক্ট তখত-এ–অভিনয় করব। তবে সত্যি বলতে, এতটা ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটাতে আমি অভ্যস্ত নই। তিন মাসে মাত্র তিন ঘণ্টা করে ঘুম আমার কাছে খুবই কষ্টকর। আমি অতটাও পরিশ্রমী নই। একটু আরামপ্রিয়। তবে দীপিকা আবার এই ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ও আমাকে শেখাচ্ছে কীভাবে সময়ের সঙ্গে চলতে হয়। ও আমার পাশে না থাকলে আমার জীবনটা এভাবে গোছাতে পারতাম না।

দর্শকের প্রতিক্রিয়া, না ট্রফি, আপনার কাছে কোনটার গুরুত্ব বেশি?

মঞ্চে উঠে ট্রফি নেওয়ার মজাই আলাদা। আর সেই ট্রফি মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার মতো আনন্দ আর কিছুতে নেই। তবে যখন দেখি, হলে বসে দর্শক আমার অভিনয় দেখে কাঁদছেন, হাসছেন, তখন মনে হয়, এটাই জীবনের সেরা প্রাপ্তি। আমি সেই ছেলে যে সিনেমা হলে গিয়ে পর্দার নায়কের সঙ্গে নাচতাম। শিস বাজাতাম। কিন্তু এখন আমার সিনেমা দেখে দর্শক এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেন। আমার দুর্দান্ত লাগে। দর্শক এখন আমার ছবি দেখে শিস বাজান, পয়সা ছুড়েন। আমি অন্ধকারে চুপিসারে দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখতে থিয়েটারে যাই। আমার হাতে ট্রফি দেখে বাবা-মা, স্ত্রীর চোখে জল চিকচিক করে। কিন্তু আমার চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দর্শক যখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদেন, তার গুরুত্ব আমার কাছে অনেক বেশি।

ব্যক্তি রণবীরের সঙ্গে পর্দার ‘সিম্বা’র কোথাও কি মিল আছে?

‘সিম্বা’র মতো আমিও খুব সাহসী। আমি জীবনে কোনো কিছুকে ভয় পাই না। এমনকি মৃত্যুকেও না। আর আমাকে এই সাহস আর প্রেরণা জুগিয়েছে আমার পরিবার। আমাকে শুধু অভিনয় ছাড়া আর কোনো কিছুতে তারা মাথা ঘামাতে দেয়নি। আমি শুধু মনপ্রাণ দিয়ে আমার কাজ করে গেছি। আমার বাবা কাজের সূত্রে বাইরে থাকতেন। আমি বড় হয়েছি মা, দিদি, দাদি মানে, বাড়ির সব নারীর মধ্যে। তাই আমার আত্মাটা অনেকটা মেয়েদের মতো। ছোটবেলা থেকে আমি মেয়েদের খুব সম্মান করি। আর ‘সিম্বা’ও মেয়েদের সম্মান করে। ‘সিম্বা’র এই দুটো গুণ আমার মধ্যে ভরপুর।

পুরো নাম: রণবীর সিং ভবানি

জন্ম: ৬ জুলাই, ১৯৮৫, মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত

বাবা: জগজিৎ সিং ভবানি

মা: অঞ্জু ভবানি

শিক্ষাগত যোগ্যতা: অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে স্নাতক করেন।

প্রথম চাকরি: কপিরাইটার হিসেবে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় প্রথম চাকরি নেন।

প্রথম চলচ্চিত্র: ব্যান্ড বাজা বারাত (২০১০)।

চলচ্চিত্রের সংখ্যা: ১১। (মুক্তির প্রতীক্ষায় আছে আর ২টি: সিম্বা গাল্লি বয়)।

পুরস্কার: ফিল্মফেয়ার, আইফা, জি সিনে অ্যাওয়ার্ডসহ ৮ বছরের অভিনয়জীবনে জিতেছেন ২৮টি পুরস্কার।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: দেবারতি ভট্টাচার্য