ক্ষোভ আর কষ্ট নিয়ে চলে গেলেন কাদের খান

কাদের খান
কাদের খান

কাদের খানের জন্ম আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হলেও তাঁর পড়াশোনা, শিক্ষকতা এবং পরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া—সবকিছুই হয়েছে মুম্বাইয়ে। রাজেশ খান্না অভিনীত ‘দাগ’ ছবি দিয়ে ১৯৭৩ সালে বলিউডে অভিনয়জীবন শুরু করেন কাদের খান। বলিউডে তিনি অভিনয় করেছেন তিন শতাধিক ছবিতে। ২৫০টি ছবির সংলাপ লিখেছেন। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ‘হোগ্যায়া দিমাগ কা দাহি’ মুক্তি পায় ২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর। বলিউডের প্রখ্যাত এই অভিনেতা আর নেই। কানাডার টরন্টোর একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছয়টায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

কাদের খানের মৃত্যুর পর সামনে এসেছে তাঁর কিছু ক্ষোভ আর কষ্টের কথা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অভিনেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অনেকেই বলছেন, কাদের খান চলচ্চিত্রকে অনেক দিয়েছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে কিছু ক্ষোভ নিয়ে চলে যেতে হলো। যে মুম্বাই তাঁকে এত যশ, খ্যাতি আর সম্মান দিয়েছে, মৃত্যুর আগে তিনি সেই শহরকে ত্যাগ করে চলে যান টরন্টোতে, ছেলে সরফরাজ খানের কাছে। এ সময় তাঁর মনে ছিল অনেক কষ্ট। মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ মুম্বাই আনতে চাননি তাঁর পরিবার। যদিও বার্তা সংস্থা পিটিআইকে সরফরাজ খান বলেছেন, ‘মুম্বাই নয়, বাবাকে টরন্টোতে দাফন করা হবে। এখানে আমাদের পুরো পরিবার রয়েছে। আমরা সবাই এখানেই থাকি। তাই বাবার শেষ কাজও এখানেই হবে।’

কাদের খান
কাদের খান

কী সেই ক্ষোভ আর কষ্ট? হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননার জন্য কাদের খানের নাম ছিল বিবেচনায়। তখন কাদের খানের অসুস্থতা ক্রমেই বাড়ছে। তাই আগ্রহীরা চেয়েছিলেন, কাদের খানের জীবদ্দশায় যেন তাঁকে এই রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়। খবরটি পৌঁছে গিয়েছিল কাদের খানের কাছেও। তখন তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘সরকার যদি মনে করে এই সম্মান পাওয়ার মতো কাজ আমি করেছি, তাহলে আমি তা পেতে পারি। তবে আমাকে যেন এই সম্মান দেওয়া হয়, এর জন্য এত মানুষ সরকারকে অনুরোধ করেছেন, তাঁদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।’

শেষ পর্যন্ত ‘পদ্মশ্রী’ পাননি কাদের খান। ‘হোগ্যায়া দিমাগ কা দাহি’ ছবির প্রচারণার সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তিনি। সেটাই ছিল তাঁর শেষ সাক্ষাৎকার। যাঁরা পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন, সেই তালিকা দেখে কাদের খান বলেছিলেন, ‘খুব ভালো কথা যে আমি পদ্মশ্রী পাইনি।’ তবে তিনি আঙুল তুলেছিলেন সংশ্লিষ্টদের ‘সততা’র দিকে। ব্যাপারটি তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘জীবনে কখনো চাটুকারিতা করিনি। ভবিষ্যতেও করব না। এখন যে অভিনেতাদের পদ্মশ্রী দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের দিলে আমার আর দরকার নেই।’

কাদের খান
কাদের খান

কাদের খান আরও বলেছিলেন, ‘পুরস্কার জীবনে বড় কথা নয়। কিন্তু কাদের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, সেটা বড় কথা। আগে এ ধরনের পুরস্কারের জন্য প্রাপকদের বাছাই করা হতো সততার সঙ্গে। কিন্তু সেই দিন আর নেই। মানুষ এখন খুব বেশি স্বার্থপর। ঠিকমতো সম্মান দিতেও ভুলে গেছে। যাঁরা এই বছর পদ্মশ্রী পেলেন, তাঁদের মতো যোগ্যতা আমার নেই। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই, যাঁরা পদ্মশ্রীর জন্য আমার নাম পাঠিয়েছেন।’

বলিউডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে কাদের খানের ছিল তীব্র আপত্তি। সেই সাক্ষাৎকারে সহকর্মীদের রাজনীতি থেকে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ফিরে এসো, রাজনীতি তোমাদের লক্ষ্য নয়।’