'সিমবা'র জয়

‘সিমবা’ ছবির পরিচালক রোহিত শেঠি, ছবির নায়ক রণবীর সিং ও নায়িকা সারা আর প্রযোজক করণ জোহর
‘সিমবা’ ছবির পরিচালক রোহিত শেঠি, ছবির নায়ক রণবীর সিং ও নায়িকা সারা আর প্রযোজক করণ জোহর

কলকাতার পথঘাটে সুনসান নীরবতা। রাত তখন সাড়ে ১২টা। সাউথ সিটি মলের আইনক্স থেকে ‘সিমবা’র রাতের প্রদর্শনী দেখে ফিরছি তিনজন। সাদার্ন অ্যাভিনিউতে ঢোকার মুখে ঘ‍্যাঁচ করে ব্রেক করলেন উবার চালক আদিত। তিনটি ভাষায় পারদর্শী এ যুবকের বাড়ি ঝাড়খন্ডে। তাঁর গাড়ি চার রাস্তার মাথা স্পর্শ করার উপক্রম করতেই ট্রাফিক সিগনালের লালবাতি জ্বলে ওঠে। কোনো গাড়ি বা মানুষ ছিল না রাস্তায়। কিন্তু নিয়ম মেনে ব্রেক কষেন তিনি। বিষটি দেখে নিজেকেই প্রশ্ন করি, ঢাকার চালক হলে কী করতেন?

‘সিমবা’ ছবির দৃশ্যে রণবীর সিং
‘সিমবা’ ছবির দৃশ্যে রণবীর সিং

বিয়ের পর দীপিকা পাড়ুকোনের বর রণবীর সিংয়ের প্রথম ছবি ‘সিমবা’। আইনক্সের টিকিট কাউন্টার থেকে বলে দিল, ‘“জিরো”র থেকে বেটার এটা, টাকা উঠে যাবে।’ ৬৪৫ রুপি করে টিকিট কিনে আমরা ঢুকে পড়লাম একটা ভুল হলে। টিকিট দেখিয়ে এক জোড়া তরুণ-তরুণীকে তুলে দিয়ে বসেও পড়লাম। সঙ্গে সঙ্গে চলমান ছবিটির বিরতি হয়ে গেল। সে সময় তাঁদেরই জিজ্ঞেস করতে হলো, কী ছবি চলছে এটা?

ছয় নম্বর পর্দার হলটির নাম ‘ইনসিগনিয়া’। সেটার পরিবেশ ও বসার ব্যবস্থা রাজকীয়। বাড়ির বসার বা শোয়ার ঘরের মতো আসনে ঠিক শুয়ে সিনেমা দেখার ব্যবস্থা। ডান হাতের কাছেই খাবারের মেন্যু। বাঁ পাশের নির্ধারিত বোতাম টিপলে পরিবেশনকারীরা এসে খাবারের ফরমাশ নিয়ে যাবেন।

‘সিমবা’ ছবির দৃশ্যে রণবীর সিং
‘সিমবা’ ছবির দৃশ্যে রণবীর সিং

এই প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ অসাধারণ। পর্দার আকার, রেজ্যুলেশন, সাউন্ড—গোল্ডেন এ প্লাস। কলকাতার সবচেয়ে রাজকীয় হল সম্ভবত এটিই। আর সিনেমায় ‘সিমবা’ তার দর্শকদের এক মুহূর্তের জন্য অন্যমনস্ক হতে দেয়নি। ছবির গল্পটি সাধারণ; ভালো ও মন্দের দ্বন্দ্বে মন্দের পরাজয়। তবে ছবিটির সংলাপ আনন্দদায়ক, নির্মাণ চোখের জন্য আরামদায়ক। বাণিজ্যিক ঘরানার ছবি হিসেবে পূর্ণ বিনোদনের সব ব্যবস্থা ছিল এতে।

‘সিমবা’ ছবির দৃশ্যে সারা ও রণবীর সিং
‘সিমবা’ ছবির দৃশ্যে সারা ও রণবীর সিং

ছবিতে সারা আলী খানের চরিত্রটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। নতুন একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে জড়তা তাঁর রয়েই গেছে। তাঁকে দেখতে ভালো লাগলেও রণবীর সিংয়ের সঙ্গে কেন যেন জমাতে পারেননি তিনি। বরং অন্য চরিত্রগুলোর সঙ্গে রণবীর সিং, অর্থাৎ পুলিশ অফিসার সিমবার অভিনয় ছিল নজর কাড়ার মতো। খলনায়ক দুর্বা রানাডের চরিত্রে সোনু সুদের অভিনয়ও চমৎকার। ছবিতে বাড়তি পাওনা ‘বাজিরাও সিংহাম’ অজয় দেবগনের উপস্থিতি। তবে শেষ দৃশ্য অক্ষয়ের উপস্থিতি তেমন কোনো অর্থ দাঁড় করাতে পারেনি।

কলকাতার মানুষ প্রচুর সিনেমা দেখে। ভালো সিনেমা তাই ব্যবসাও করে। অদ্ভুত ঘটনা হচ্ছে ‘সিমবা’ মুক্তির এক সপ্তাহ আগে মুক্তি পাওয়া শাহরুখ খানের ‘জিরো’ টানতে পারেনি দর্শকদের, রোজগারেও ছাড়াতে পারেনি ‘সিমবা’কে।