কারও ঘর ভাঙতে চাইনি: সাবিত্রী

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়

ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমার অনেক সম্বন্ধই ভেঙে দিয়েছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার জীবনে কখনো প্রেম আসেনি, তা নয়; কিন্তু উত্তমকুমার আমার অনেক সম্বন্ধ ভেঙে দেন। উত্তমকুমার বরাবরই আমার প্রতি পজিটিভ ছিলেন। আমি কখনো চাইনি, কেউ সংসার ভেঙে আমার কাছে চলে আসুক। আমার কপালে যদি বিবাহিত পুরুষ জোটে, তবে কী করব? ভালোবাসব না? তবে উত্তমকুমারকে পাইনি বলে বিয়ে করিনি, তেমনটা নয়। বন্ধু অনেক ছিলেন। সবাই ছিলেন বিবাহিত। আর আমি কারও ঘর ভাঙতে চাইনি।’

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মঞ্চের অভিনেত্রী। ছিলেন স্টার থিয়েটারের সদস্য। চলচ্চিত্রে তাঁর প্রথম ছবি ‘সহযাত্রী’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫১ সালে। এই ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন উত্তমকুমার ও ভারতী দেবী। পরিচালনা করেছেন অগ্রদূত। এর পর পেরিয়ে গেছে ৬৮ বছর। পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত তিনি অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের নিজের বয়স এখন ৮১ বছর। নিজের প্রেম আর কেন বিয়ে করতে পারেননি, এসব নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন কলকাতার একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বিয়ে আর সংসার নিয়ে বললেন, ‘বিয়ে হয়নি, তাই বলে কোনো আফসোস নেই। কারণ, আমার দিদির ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছি। ওরা এখনো আমাকে ভালোবাসে। ডাকলে চলে আসে। ওদের সবার তো সংসার আছে। তবে এটা ঠিক, এত বড় বাড়িতে থাকতে সত্যিই একা লাগে।’

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লার কমলাপুর গ্রামে ১৯৩৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। তাঁর বাবা তখন ভারতে রেলওয়েতে চাকরি করতেন। ১০ বোনের মধ্যে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সবার ছোট। দেশভাগের পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ছিলেন টালিগঞ্জে এক বোনের বাড়িতে। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর অভিনয়জীবন। প্রখ্যাত অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মঞ্চে নিয়ে আসেন। তারপর সুযোগ পেয়ে যান চলচ্চিত্রে। তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘পাশের বাড়ি’, ‘রাতভোর’, ‘উপহার’, ‘অভয়ের বিয়ে’, ‘নূপুর’, ‘গলি থেকে রাজপথ’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘কুহক’, ‘বধূ’, ‘ভ্রান্তি বিলাস’, ‘উত্তরায়ণ’, ‘জয়া’, ‘কাল তুমি আলেয়া’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘মাল্যদান’। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি এখন তিনি টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করছেন।

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় পেয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মশ্রী’, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’সহ নানা পদক ও সম্মাননা।

প্রথম দিনের শুটিংয়ের স্মৃতি নিয়ে তিনি বললেন, ‘শুটিংয়ের প্রথম দিন বাসে করে গিয়েছিলাম স্টুডিওপাড়ায়। পাশের বাড়ি থেকে একটি শাড়ি নিয়েছিলাম। প্রথম অভিনয়ের পর সবাই হাততালি দিয়ে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। তখন মাসে আমাকে ২০০ টাকা করে দিত। তাও তখন তিন মাসের টাকা পাইনি।’

উত্তমকুমারের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের প্রেম ছিল? সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘আমি জানি না। আমার মনে হয় না। আমি তো ওদের কাছ থেকেই দেখেছি।’

আপনার সঙ্গে উত্তমকুমারের প্রেম ছিল? সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘তা ছিল তো খানিকটা। তবে রটনাটা বেশি ছিল। আসলটা কম। তখন শোনা গিয়েছিল, তিনি আমাকে বিয়ে করে বালিগঞ্জে বাড়ি ভাড়া করে আছেন। তখন এ খবর নিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। আসলে সেসব কিছুই হয়নি। আর তারপর থেকে আমার জীবনে আরও ট্র্যাজেডি নেমে আসে। ওসব নিয়ে এখন আর বলতে চাই না।’