অলোক নাথ নিষিদ্ধ

অলোক নাথ
অলোক নাথ

বলিউডের প্রবীণ অভিনেতা অলোক নাথের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৭ অক্টোবর মুম্বাই পুলিশের কাছে ধর্ষণ ও যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেন ছোট পর্দার স্ক্রিপ্ট রাইটার এবং পরিচালক ও প্রযোজক বিনতা নন্দা। তিনি বড় পর্দায়েও কাজ করেছেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ নভেম্বর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় অলোক নাথের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করা হয়। এদিকে ফেডারেশন অব ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (এফডব্লিউআইসিই) অলোক নাথকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। এই সময় তিনি ছোট পর্দা কিংবা বড় পর্দার কোনো কাজ করতে পারবেন না।

জানা গেছে, দ্য ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএফটিডিএ) প্রেসিডেন্ট অশোক পণ্ডিত বলেন, ‘অলোক নাথের বিরুদ্ধে আমাদের সদস্য পরিচালক বিনতা নন্দা যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেছেন। তা তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। অলোক নাথের কথা জানার জন্য ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি (আইসিসি) তিনবার তাঁকে ডেকে পাঠায়। কিন্তু তিনি এই তদন্তকাজে সহযোগিতা দূরে থাক, কোনো বৈঠকেও আসেননি। এরপর বিষয়টি এফডব্লিউআইসিইকে জানানো হয়। সবকিছু বিবেচনা করে এফডব্লিউআইসিই অলোক নাথকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। এই সিদ্ধান্তের কথা অলোক নাথকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

অশোক পণ্ডিত আরও বলেন, ‘আমরা যেকোনো যৌন হেনস্তার অভিযোগকে গুরুত্ব দিই। কারণ কর্মক্ষেত্রে যাতে মেয়েদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।’

এফডব্লিউআইসিইর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পরে সংবাদমাধ্যম থেকে অলোক নাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, ‘আইন সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।’

এর আগে অলোক নাথকে সিনে অ্যান্ড টিভি আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিআইএনটিএএ) বহিষ্কার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য সংগঠনটি একটি সভা আহ্বান করে। সেখানে তাঁকে ডাকা হয়। কিন্তু সেই সভায় উপস্থিত হননি অলোক নাথ। তার পরই সিআইএনটিএএর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পুলিশের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে বিনতা নন্দা লিখেছেন, ‘অলোক নাথ মদ্যপ, অসভ্য আর বিরক্তিকর মানুষ। যেহেতু তিনি টেলিভিশনের জনপ্রিয় তারকা, তাই খারাপ কাজ, অপকর্ম, খারাপ ব্যবহার করেও তিনি সহজেই পার পেয়ে যান।’ এত দিন পর বিনতা নন্দা কেন এসব কথা বলছেন? বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে তিনি বলেন, ‘১৯ বছর ধরে এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করেছি।’

অভিযোগপত্রে বিনতা নন্দা আরও লিখেছেন, ‘অলোক নাথের স্ত্রী ছিলেন আমার ভালো বন্ধু। একসঙ্গে থিয়েটার করতাম। এ কারণে অলোক নাথের বাসায় আমার যাওয়া-আসা ছিল। অলোক নাথের বাসার এক পার্টিতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন তাঁর স্ত্রী ছিলেন শহরের বাইরে। সেদিন পার্টিতে আমার গ্লাসে কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি যখন তাঁর বাসা থেকে বের হয়েছি, তখন রাত দুইটা। আমার সঙ্গে গাড়ি ছিল না। সেদিন কেউ আমাকে বাসায় নামিয়ে দেওয়ার জন্য বলেনি। রাস্তায় আমি একাই ছিলাম। হঠাৎ অলোক নাথ গাড়ি নিয়ে আসেন। তিনি আমাকে বাসায় নামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমিও তাঁকে বিশ্বাস করেছি। কিন্তু গাড়িতে ওঠার পর আমাকে জোর করে আরও মদ খাওয়ানো হয়। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরদিন ঘুম থেকে ওঠার পর আমার শরীরের নিচের অংশে খুব ব্যথা অনুভব করি। বুঝতে পারি, শুধু ধর্ষণ নয়, বর্বরতার শিকার হয়েছি আমি। ওই সময় বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না।’