'সিমলা কিন্তু ফালতু নায়িকা না'

সিমলা
সিমলা
>হঠাৎ করে আলোচনায় চিত্রনায়িকা সিমলা। ‘ম্যাডাম ফুলি’ সিনেমার আলোচিত এই নায়িকা মাস চারেক ধরে ভারতের মুম্বাইয়ে মীরা রোডের একটি বাড়িতে থাকছেন। তিন দিন আগে চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত পলাশের কারণে আলোচনায় আসেন সিমলাও। বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত সেই সঙ্গে যুবকের সঙ্গে বিয়ের খবর প্রকাশের কারণে বেশি আলোচিত তিনি। আজ বুধবার বিকলে মুম্বাই থেকে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জানালেন সেখানে তিনি কী করছেন? কীভাবে সময় কাটছে সেখানে এবং নিজের ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে।
সিমলা
সিমলা

মুম্বাইয়ে কোথায় থাকছেন, কী করছেন?
মুম্বাইয়ের মীরা রোডের একটি বাসায় থাকি আমি। সামনে ‘সফর’ নামে আমার প্রথম হিন্দি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। ডাবিং থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ শেষ। শুনেছি, একদিন পোস্টারের ফটোশুট করতে হবে। আপাতত এই নিয়ে আছি। বেশ ভালোই আছি। নতুন কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করছি।

মুম্বাই গেলেন কবে?
নভেম্বরে আমি ডিভোর্স দিই। ১৫ নভেম্বর মুম্বাই আসছি। এখানেই থাকছি।

দেশে ফিরবেন কবে?
কবে ফিরব বুঝতেছি না। বাংলাদেশে তো সিনেমার কাজও নেই। তবে আমার সাবেক স্বামীর ঘটনার তদন্তের স্বার্থে যদি আমাকে ডাকা হয়, তাহলে আসব। এর বাইরে বাংলাদেশে যাওয়ার আপতত চিন্তা নাই।

মাত্র একটি ছবির কাজ করেছেন। নতুন কোনো কাজের খবরও নেই। মুম্বাইয়ে সময় কাটছে কীভাবে?
এটা ঠিক যে এখানে নিয়মিত কাজ নেই। আমার সময় কেটে যাচ্ছে। আমি অভিনয়ের ক্লাস করছি। কিছুদিন আগে নাচ শিখতাম, এখন অবশ্য আর নাচের ক্লাস করা হয় না।

অভিনয়ের ক্লাস কোথায় করছেন?
যাঁদের সিনেমায় অভিনয় করেছি, মীরা রোডে তাদেরই পরিচিত একটি ইনস্টিটিউটে ক্লাস করছি। অতটা ফেমাস না এই প্রতিষ্ঠান।

গোপনে বিয়ে করেছিলেন। হঠাৎ করে ডিভোর্স দেওয়ার কারণ কী ছিল?
আমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, সে লন্ডনে থাকে। সেখানে ব্যবসা করে। সিনেমার প্রতি তাঁর আগ্রহ আছে। বিয়ের পর আমাকে সে লন্ডনে নিয়ে চলে যাবে। আমাকে দিয়ে কাগজপত্রও তৈরি করিয়েছিল। কিন্তু একটা সময় দেখলাম, সবই ভুয়া। আরও অনেক মিথ্যা কথা বলেছিল সে। কথা ও কাজের কোনো মিল পাচ্ছিলাম না। আচার–আচরণ স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল না। অল্প কদিনের পরিচয়ে বিয়ের কারণে ঠিকভাবে চিনতেও পারিনি। বিয়ের পর একেবারে অপরিচিত একজন মানুষকে দেখতে লাগলাম। রহস্যময় মনে হচ্ছিল। ভাবলাম, এই ধরনের মানুষের সঙ্গে দাম্পত্যজীবনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাটা অসম্ভব। সবকিছু ভেবে, তাই আমি নিজে থেকে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিই।

সিমলা
সিমলা

ওটা কি তাঁর প্রথম বিয়ে ছিল?
আমি ছিলাম ওর দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের কিছুদিন পর শুনলাম, ওই সংসারে নাকি তাঁর একটি সন্তানও আছে। ওদের পরিবারকেও আমি ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

আপনারও কি প্রথম বিয়ে?
আমার যদি আগে বিয়ে হতো, এত বছরের ক্যারিয়ারে আপনারা তো কিছুটা হলেও জানতেন।

কিন্তু এই ঘটনা না ঘটলে তো এবারও বিয়ের কথা বলতেন না। জুলাইয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আপনার কাছে বিয়ের বিষয়টি জানতে চাইলে অস্বীকার করেছিলেন।
আমি আসলে বিয়েটাকে একান্ত ব্যক্তিগত রাখতে চেয়েছিলাম। তাই বিয়ের বিষয়টি সবাইকে জানাতে চাইনি। বিয়ে নিয়ে ঢাকঢোল পিটানোর কিছু নাই। তবে এটাও ঠিক, আড়াল করার আহামরি কোনো কারণও ছিল না। আমার মনে হয়েছে, দেখি না আরও কয়েকটা দিন, যদি সবকিছু সেটেল্ড হয়— তাহলেই সবাইকে জানাব। তার আগেই তো ডিভোর্স হয়ে গেল।

চট্টগ্রামের বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা যদি না ঘটত তাহলে কি আপনার বিয়ের ব্যাপারটি সামনে আসত?
অবশ্যই আসত। আজ হোক আর কাল হোক এটা প্রকাশ হতোই। বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর কোথাও তারকাদের বিয়ে গোপন করার কোনো সুযোগই নেই। আমি সিমলা তো খুব নগণ্য একজন মানুষ। আমি বিয়েটাকে আসলে সিরিয়াসলি নেইনি, অভিনয় নিয়ে যতটা সিরিয়াস ছিলাম। স্বচ্ছন্দবোধে বেঁচে আছি কাজের ভালোবাসায়। জীবনের সব ক্ষেত্রে সোজা রাস্তা পাব, সেটাও তো না। আমি খুব শান্তিপ্রিয় একজন মানুষ। তাই ঝামেলা না বাড়িয়ে সরে পড়েছি। ১৯৯৯ সালে আমার ‘ম্যাডাম ফুলি’ সিনেমা মুক্তি পায়। সে হিসেবে ২০ বছরের অভিনয়জীবন আমার। আমার কোনো কিছুই কিন্তু গোপন নাই। আমি নিজেও খোলা বইয়ের মতো। আমার কোনো স্ক্যান্ডালও নাই। নিজের কাজে আমি খুব সৎ। ওপরওয়ালা আমাকে ভালো রেখেছেন, তিনি আমাকে কষ্ট দেবেন না। আমার মনের মধ্যে কোনো প্যাচগোছ নেই।

সিমলা
সিমলা

মুম্বাইয়ে আপনি একাই থাকেন, নাকি পরিবারের অন্যরাও থাকেন?
আমি একাই থাকি। আমি কি ছোট্ট শিশু নাকি! এবার আসার পর মা কিছুদিন সঙ্গে ছিলেন। প্রথম যখন নায়িকা হতে এসেছিলাম, তখন আমার ভাইও ছিলেন। মায়েরও বয়স হয়েছে, ভাইয়ের কাজ আছে, সবাই যাঁর যাঁর মতো করে ব্যস্ত। তা ছাড়া, আমি খুবই ম্যাচিউরড একজন মানুষ। একা থাকার মতো বয়স তো আমার হয়েছে নাকি? আমি ছোট্ট খুকি নই, ফিল্মের বাতাস বুঝি।

মুম্বাই তো খুব ব্যয়বহুল শহর। ব্যয় কীভাবে সামলে নিচ্ছেন?
আমি তো বিলাসিতা করে থাকছি না। গাড়ি–বাড়ি নিয়ে থাকছি না। একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে থাকার, সেভাবে থাকছি। যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক তত। বাংলাদেশেও কিন্তু আমি সাধারণ জীবন যাপন করতাম। তবে আমার অতটুকু সামর্থ্য নিশ্চয় আছে, যা দিয়ে বিলাসি জীবনযাপন না করতে পারি, সাদামাটাভাবে থাকতে পারি। আমি যদি না খেয়ে থাকি, বাংলাদেশ থেকে কেউ কি আমাকে খাবার দিয়ে যাবে? এখন কি কান্না করে বলব, আমি না খেয়ে আছি। মানুষ কি মনে করল না–করল, তাতে আমার কিছু যায়–আসে না। তবে মানুষের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। সিমলা অভিনয় দিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। সিমলা ফালতু একটা নায়িকা না। নায়িকাদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন আসতেই পারে। কিন্তু এখন তো ২০১৯ সাল, এত দরিদ্র মন নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে কী করে!

আপনি কি বলিউডে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইছেন?
আমি এত কিছু জানি না। ভাগ্য যদি সহায়ক হয় তাহলে হতেও পারে।

কিন্তু মুম্বাইয়ে থাকার নিশ্চয় একটা উদ্দেশ্য তো আছে?
এখানে একটা স্বপ্ন নিয়েই আমি এসেছি। এখানে কাজের জায়গা করতে চাই। আহামরি হয়তো পারব না, চেষ্টা করব, কিছু স্বপ্ন যাতে পূরণ হয়। আমি বলিউডে কাজ করতে চাই, এটাই আমার স্বপ্ন।

নায়িকা নাকি চরিত্রাভিনেত্রী?
অবশ্যই নায়িকা। আমার কি বলিউডে নায়িকা হওয়ার যোগ্যতা নাই নাকি! আমি মনে করি, বলিউডের অনেকের চেয়ে অনেক বেশি যোগ্যতা আমার আছে।

শেষ করব। ক্যমেরার পেছনে কাজ করার কথাও বলেছিলেন ...
ক্যামেরার পেছনে কাজ করার একটা আগ্রহও আমার আছে। দু–এক বছর পর এই স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করব। তখন তো আর চেহারা আর বয়স লাগবে না (হাসি)।