নৃত্য-গীতে সম্মাননা প্রাপ্তির উদযাপন ছায়ানটের

টেগোর অ্যাওয়ার্ড ফর কালচারাল হারমোনি সম্মাননা প্রাপ্তিতে ছায়ানটের বিশেষ আয়োজনে অনুভূতি জানাচ্ছেন সন্‌জীদা খাতুন। গতকাল ছায়ানট ভবন মিলনায়তনে।  ছবি: সংগৃহীত
টেগোর অ্যাওয়ার্ড ফর কালচারাল হারমোনি সম্মাননা প্রাপ্তিতে ছায়ানটের বিশেষ আয়োজনে অনুভূতি জানাচ্ছেন সন্‌জীদা খাতুন। গতকাল ছায়ানট ভবন মিলনায়তনে। ছবি: সংগৃহীত

সংস্কৃতির মাধ্যমে জাতিসত্তার বিকাশে নিরবচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘ পথচলার সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি ভারত সরকার প্রদত্ত আন্তর্জাতিক সম্মাননা ‘টেগোর অ্যাওয়ার্ড ফর কালচারাল হারমনি’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে ছায়ানট। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লির প্রবাসী ভারতীয় কেন্দ্রে দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুনের হাতে তুলে দেন সেই সম্মাননা। সেই প্রাপ্তির উদযাপন হলো গতকাল।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নৃত্য-গীতে সজ্জিত সে আয়োজনে উচ্চারিত হলো ছায়ানটের কণ্টকাকীর্ণ অতীত পথচলার কথা, ব্যক্ত হয়েছে বাঙালির সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় প্রতিষ্ঠানটির গৌরবগাথা।

সম্মাননার পটভূমি বর্ণনা করে স্বাগত জানান ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে কথনপর্বের সমাপ্তি টানেন ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন। পুরস্কার গ্রহণের অনুষ্ঠানে যোগদানের অনুভূতি প্রকাশ করেন প্রতিষ্ঠানের সহসভাপতি আবুল হাসনাত। অতিথিকথনে অংশ নেন নেন ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (আইজিসিসি) পরিচালক নীপা চৌধুরী।

ধন্যবাদ জ্ঞাপনে টেগোর অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘ওই সম্মাননা গ্রহণের সময় অনুভূতি প্রকাশে আমাকে ছায়ানটের অতীতের কণ্টকাকীর্ণ পথচলার কথা বলতে হয়েছে। জাতি হিসেবে বাঙালিত্বের অহংকারবোধ উঠে এসেছে আমার বক্তব্যে। বলেছি, রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শনের পথরেখায় সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি রচনার অনুসারী আমরা।’

কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে উদুর্র সঙ্গে বাংলাকে রাজভাষা করা হলেও নানাভাবে চলেছে পাকিস্তান সরকারের আগ্রাসন। কিন্তু তারা এ দেশের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, রবীন্দ্র নামাঙ্কিত এ পুরস্কার নতুনভাবে অনুপ্রেরণা জাগাবে ছায়ানটকে।

সারওয়ার আলী বক্তৃতায় স্মরণ করেন সুফিয়া কামাল, ওয়াহিদুল হককে—যাঁরা সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে মিলিতভাবে ছায়ানটের পথরেখা বিনির্মাণ করেছিলেন। তাই এ অর্জন ছায়ানটের একার নয়, পাকিস্তান আমল থেকে এ পর্যন্ত যাঁরা ছায়ানটের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের সবার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছায়ানটের প্রাক্তন ছাত্রী। আজ ছায়ানট যে জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, ১৯৯৬ সালে তিনি এটি দান করেছিলেন। সারা বিশ্ব যখন উগ্রবাদে আক্রান্ত হচ্ছে, তখন ছায়ানট উদারনৈতিক সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে মানবিক সম্প্রীতির কথা বলছে।

সম্মাননা প্রাপ্তি উদযাপন শেষ হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। গান করেন রেজোয়ান আলী, খায়রুল আনাম শাকিল, লাইসা আহমদ লিসা, চন্দনা মজুমদার ও ছায়ানটের শিল্পীরা। ছিল সম্মেলক নৃত্য-গীত।