শিশুদের হাত ধরে রঙিন উৎসব

আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব প্রাঙ্গণে দুই স্বেচ্ছাসেবক মেতে উঠেছেন সাইকেল নিয়ে। ছবি: প্রথম আলো
আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব প্রাঙ্গণে দুই স্বেচ্ছাসেবক মেতে উঠেছেন সাইকেল নিয়ে। ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর গোপীবাগ থেকে চিকিৎসক শম্পা সেনগুপ্ত এসেছেন মেয়ে সপ্তদীপাকে নিয়ে। সপ্তদীপা পড়ে ক্লাস থ্রিতে। বেলা দেড়টার দিকে এই মা-মেয়ে হাত ধরাধরি করে বের হলেন পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তন থেকে। মিলনায়তনে এতক্ষণ ধরে চলছিল রাইডার নামের একটি কোরিয়ান ছবি। সপ্তদীপা কী একটা দৃশ্যের কথা হাত নেড়ে হাসতে হাসতে বলছিল মাকে। মেয়ের হাসি থামলে মা বললেন, ‘আজ আমি ছুটি পেয়েছি। মেয়েরও স্কুল বন্ধ। তাই দুজন মিলে চলে এসেছি আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে। ওর সঙ্গে আমারও দারুণ সময় কাটছে।’

শম্পাই শুধু নন, ২ মার্চ শুরু হওয়া ১২ তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯–এ এমন অসংখ্য দর্শক আসছেন। শিশুদের নামে আয়োজন হলেও বড়রাও শামিল হচ্ছেন তাতে। আসছে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। গতকাল যেমন এসেছিল রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ৩০০ শিক্ষার্থী। মিলনায়তনজুড়ে তাদের জড়তাহীন হুল্লোড় আর ছবির ফাঁকে ফাঁকে করতালি মনে করিয়ে দিল এই উৎসব আসলে শিশুদেরই। দুপুরের পর উৎসবে যোগ দিয়েছে নালন্দা স্কুল। আয়োজকদের দেওয়া বাসে করেই উৎসবে আসছে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

শুধু দর্শকেরাই শিশু এমন নয়, পুরো উৎসবটাই শিশুদের নজরদারিতে। উৎসবের মোট চারটি ভেন্যুতে কাজ করছে ১৮৬ জন স্বেচ্ছাসেবক। যাদের সবার বয়স ১০ থেকে ২০–এর মধ্যে। সমন্বয়কারী কাজী মাহমুদুল হক জানালেন, বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দলগতভাবে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবকেরা। যারা কম বয়সী, তারা মিলনায়তনের ভেতরে আলো জ্বেলে দর্শকদের আসনটা দেখিয়ে দেওয়া, মুঠোফোন বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়াসহ বেশ কিছু ব্যাপারে দর্শকদের সহযোগিতা করে। এ ছাড়া বুলেটিন টিম, প্রদর্শন টিম, মিডিয়া টিম, ইভেন্ট, ডকুমেন্টশনসহ নানা ধরনের দলে কাজ করে এই কম বয়সী শিশুরাই।

চার বছর ধরে শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন ফারিহা জাহিন। বললেন, ‘এটা এখন আমাদের কাছে পিকনিকের মতো হয়ে গেছে। টানা সাত দিনই আমরা পিকনিক মুডে থাকি। বাসা, আমাদের স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই এটি জানেন।’

গতকাল সোমবার উৎসবের চারটি ভেন্যু পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তন এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে শিশুদের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। সব ভেন্যু ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে দর্শক খানিকটা কম। কিন্তু এটি বেড়ে যায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই। বাবা-মায়ের হাত ধরে যেমন আসে শিশুরা, তেমনি বন্ধুরাও দল বেঁধে আসে। সবার লক্ষ্য রঙিন উৎসবে শামিল হওয়া।

চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে এবারের উৎসবে ৩২টি দেশের ১৭৯টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখানো হচ্ছে। ‘ফ্রেমে আঁকি আগামীর স্বপ্ন’ স্লোগানে শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ৮ মার্চ পর্যন্ত।