জলরঙে রঙিন চিত্রপট

দলীয় জলরং প্রদর্শনী ‘সোকড ইন পেপার’–এর চিত্রকর্ম দেখছেন শিল্পী এবং অতিথিরা। ছবিটি ১ মার্চ প্রদর্শনী উদ্বোধনের সময় গ্যালারি কায়ায় তোলা।  প্রথম আলো
দলীয় জলরং প্রদর্শনী ‘সোকড ইন পেপার’–এর চিত্রকর্ম দেখছেন শিল্পী এবং অতিথিরা। ছবিটি ১ মার্চ প্রদর্শনী উদ্বোধনের সময় গ্যালারি কায়ায় তোলা। প্রথম আলো

চিত্রশিল্পের ইতিহাসে জলরং মাধ্যম একটি সুপ্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে। সন-তারিখের সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও প্রস্তরযুগে ইউরোপে গুহাচিত্রে জলরং ব্যবহারের হদিস মিলেছে। বাংলাদেশের শিল্পকলায় জলরঙের ব্যবহারে শিল্পসৃষ্টি শুরু হয় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের হাত ধরে। একাডেমিক পর্যায়ে জলরংচর্চা অতি আবশ্যকীয় মাধ্যম হিসেবে অন্তর্ভুক্তির কারণে একজন শিল্পী ছবি আঁকার প্রথম চর্চা শুরু করেন জলরং দিয়ে। ক্রমে শিল্পী সিদ্ধহস্ত হন এ মাধ্যমে। এমন সিদ্ধহস্ত খ্যাতিমান নবীন-প্রবীণ ২২ জন শিল্পীর জলরঙের কাজ নিয়ে উত্তরার গ্যালারি কায়ায় চলছে দলীয় প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘সোকড ইন পেপার’। প্রদর্শনীতে কাগজে জলরঙে আঁকা ৬৬টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। কোনোটি একেবারে সাম্প্রতিক সময়ে আঁকা। আবার কোনোটি বেশ আগের, সেই ৫০–এর দশকের।

প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ শিল্পী মুর্তজা বশীর। দুটি কাজ রয়েছে তাঁর। ১৯৫৩ সালে বরেণ্য এ শিল্পী এঁকেছিলেন জলরং চিত্র ‘ল্যান্ডস্কেপ’। কোনো এক নদীর ধারে গ্রামের দৃশ্য। ছায়াঢাকা মেঠোপথে কিষান–কিষানি হেঁটে যাচ্ছেন। অন্য ছবিটির শিরোনাম ‘ল্যান্ডস্কেপ ইন মুরি ১ ’। ১৯৬১ সালে আঁকা। অনেকটা মূর্ত হয়েও চিত্রে সামগ্রিকভাবে বিমূর্ত ইমেজ তৈরি করেছে।

শিল্পী হাশেম খানের তিনটি চিত্রকর্ম—‘মাঠের গান’, ‘পায়রা’ ও ‘টিয়া’ রয়েছে প্রদর্শনীতে। শিরোনামেই বোঝা যায় শিল্পী কী বলেছেন তাঁর চিত্রপটে। শিল্পী রফিকুন নবীর চিত্রকর্ম বরাবরই মূর্ত এবং আধা বিমূর্ত। তাঁর ছবি সহজেই দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়। এই প্রদর্শনীতে এ বছরই আঁকা তাঁর ছবি দুটিও তেমন, সহজে বোঝা যায়। রঙের অপূর্ব ব্যবহার সেখানে। প্রদর্শনীর কনিষ্ঠতম শিল্পী সুমন ওয়াহিদ। তিনটি ছবির একটিতে মূর্ত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। অন্য দুটিতে বাংলার নিসর্গ।

প্রদর্শনীতে আরও স্থান পেয়েছে শিল্পী হামিদুজ্জামান খান, চন্দ্র শেখর দে, রতন মজুমদার, জামাল আহমেদ, কাজী রকিব, রণজিৎ দাস, আহমেদ শামসুদ্দোহা, মাসুদা কাজী, শেখ আফজাল হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য্য, গৌতম চক্রবর্তী, মোহাম্মদ ইকবাল, আলপ্তগীন তুষার, আনিসুজ্জামান, আজমীর হোসেন, কামালুদ্দীন, সোহাগ পারভেজ, শাহনূর মামুন ও সুমনের চিত্রকর্ম।

গ্যালারির পরিচালক শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী জানান, গত শুক্রবার এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে এসেছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রণব রঞ্জন রায়, এইচএসবিসি বাংলাদেশের ডেপুটি সিইও এবং স্থানীয় প্রধান (কান্ট্রি প্রধান) মো. মাহবুব উর রহমান।

উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত গ্যালারি কায়ায় প্রদর্শনী চলবে ১২ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।