এবার মোদির পাশে গান নিয়ে লতা

২০১৩ সালের ১ নভেম্বর। ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে বিজেপির প্রার্থী নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন করেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। সেদিন দেশটির মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনেতে লতার বাবা দীননাথ মঙ্গেশকরের নামে একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উদ্বোধন করতে যান নরেন্দ্র মোদি। অনুষ্ঠানে মোদির প্রতি সমর্থন জানান লতা। এ সময় লতার সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর এবং তিন বোন মীনা, আশা ও উষা মঙ্গেশকর। সেই অনুষ্ঠানে লতা মঙ্গেশকর তাঁর ভাষণে মোদির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক ভারতবাসী চান মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে। আমিও তা-ই চাই। মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে আমিও খুশি হব।’ অনুষ্ঠানে মোদি বলেছিলেন, ‘লতাজি যেদিন আমাকে এই হাসপাতাল উদ্বোধনের চিঠি পাঠান, সেদিন সেই চিঠি পেয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। আমার জীবনের অন্যতম সেরা উপহার এই চিঠি।’
আবারও ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে মোদির প্রশংসা। তবে এবার তিনি নরেন্দ্র মোদির পাশে দাঁড়িয়েছেন গান নিয়ে। আর কদিন পর ভারতের লোকসভা নির্বাচন। তাঁর আগে লতার এই পদক্ষেপ দেখে অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনের আগে মোদির জন্য লতার এই গান ভোটের মাঠে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের ধারণা সত্যি হলো। এরই মধ্যে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গানটি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারকাজে ব্যবহার শুরু করেছেন বিজেপি–সমর্থকেরা।
অনেক বছর গান থেকে দূরে ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে গান গাইতে দেখা যায়নি। মাস কয়েক আগে মুকেশ আম্বানির মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে ‘গায়ত্রী মন্ত্র’ রেকর্ড করলেও সবার জন্য তাঁকে গাইতে দেখা যায়নি। ২০১৪ সালের পূজায় দুটি গান গেয়েছিলেন—সলিল চৌধুরীর লেখা ‘আজকাল আমি মন দিয়ে ভাবি না’ আর দেবপ্রসাদ চক্রবর্তীর লেখা ‘কী ব্যথা আছে’। ২০১৫ সালে সংগীত পরিচালক নিখিল কামাতের জন্য ‘ডান্নো ওয়াই টু’ ছবিতে একটি গান গেয়েছেন। গানটির শিরোনাম ‘জিনা ক্যায়া হ্যায়’। চলচ্চিত্রে এরপর আর কোনো গান করেননি তিনি।
গান থেকে লতা মঙ্গেশকরের দূরে সরে যাওয়াকে অনেকেই বলেছেন স্বেচ্ছানির্বাসন। আবার তিনি গান গেয়েছেন। গতকাল শনিবার লতা মঙ্গেশকর তাঁর ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে একটি গান প্রকাশ করেছেন। গানটির শিরোনাম ‘সৌগন্ধ মুঝে সি মিট্টি কি’। গানটির প্রথম কয়েকটি লাইন হলো, ‘সৌগন্ধ মুঝে ইস মিট্টি কি/ ম্যায় দেশ নেহি মিটনে দুঙ্গা/ ম্যায় দেশ নেহি রুকনে দুঙ্গা/ ম্যায় দেশ নেহি ঝুকনে দুঙ্গা’। সুর করেছেন ময়ূরেশ পাই। সংগীত আয়োজন করেছেন গৌরব বাসওয়ানি।
এই গান শুনে ভারতের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১৯৬৩ সালে দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের পরদিন সকালে জাতীয় স্টেডিয়ামে লতা মঙ্গেশকর গেয়েছিলেন ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো’। তখন মঞ্চে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন। গান শুনে সেদিন বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন নেহরু। পরে তিনি বলেছিলেন, ‘লতাজির এই গান শুনে আমার চোখ ভিজে গিয়েছিল।’ ৫৬ বছর পর আবারও প্রায় একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটেছে।
এবার লতা মঙ্গেশকর গাইলেন নরেন্দ্র মোদির জন্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর লেখা কবিতায় তিনি সুর দিয়েছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘কিছুদিন আগে নরেন্দ্র মোদির ভাষণ শুনছিলাম। তিনি একটি কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি বলেছেন। তা শুনে মনে হলো, এটা তো ভারতের সবার মনের কথা। এই পঙ্ক্তিগুলো আমার মনকেও ছুঁয়ে গেছে। আমি কবিতাটিতে সুর দিয়ে রেকর্ড করেছি। গানটি উৎসর্গ করেছি দেশের বীর–জওয়ানদের। জয় হিন্দ।’
‘সৌগন্ধ মুঝে সি মিট্টি কি’ কবিতাটি নরেন্দ্র মোদি যখন লিখেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন আরএসএসের প্রচারক। পুলওয়ামা হামলার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতের বিমানবাহিনী বিমান হামলা করে। বালাকোটে বিমান হামলার পরদিন রাজস্থানের চুরুতে এক জনসভায় নিজের লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ‘মাটির শপথ করে বলছি, আমি দেশকে রুখতে দেব না, ঝুঁকতে দেব না।’ আর এবার লতা মঙ্গেশকরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা এই গান আমার কাছে আপনার স্নেহ আর আশীর্বাদের মতো, যা আমাকে প্রেরণা জোগাবে।’