'২০০১: আ স্পেস ওডিসি'র অজানা ১০

>

২০০১: আ স্পেস ওডিসি ছবির দৃশ্য
২০০১: আ স্পেস ওডিসি ছবির দৃশ্য

স্ট্যানলি কুবরিকের হলিউড ছবি ২০০১: আ স্পেস ওডিসিকে ইতিহাসের অন্যতম প্রভাব বিস্তারকারী সিনেমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯১ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রি সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও শৈল্পিক দিক থেকে ছবিটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে স্বীকৃতি দেয়। সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিন ২০০০ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবির তালিকার ৬ নম্বরে স্থান দেয় এই ছবিকে। গত বছর ছবিটির ৫০ বছর পূর্তি হয়।

সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য অনেক হয়েছে, কিন্তু চিত্রনাট্য থেকে সাহিত্য তৈরির ঘটনা বিরল। ২০০১: আ স্পেস ওডিসি সিনেমার মূল ভাবনাটি আসে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখক আর্থার সি ক্লার্কের ছোটগল্প ‘দ্য সেনটিনেল’ থেকে। পরে কুবরিক ও ক্লার্ক মিলে সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেন। কুবরিকের ভাষ্যমতে, খসড়া চিত্রনাট্য ছিল ১৩০ পৃষ্ঠা লম্বা। পরে চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করে ক্লার্ক একই নামের উপন্যাসটি লেখেন।

সিনেমার ২৫ মিনিট পার হওয়ার পর শোনা যায় প্রথম সংলাপ। আবার শেষ ২৩ মিনিটেও কোনো সংলাপ নেই। ১৪২ মিনিটের এই সিনেমার ৮৮ মিনিট সংলাপবিহীন।

১৯৬৮ সালের ২ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসির আপটাউন থিয়েটারের প্রিমিয়ার শো দেখে বিরক্ত হয়ে বের হয়ে আসেন ২৪১ জন দর্শক। ১৬১ মিনিটের প্রথম প্রদর্শনী দর্শকদের বিরক্ত করায় সম্পাদনার টেবিলে আবার বসে ১৯ মিনিট ছেঁটে ফেলেন কুবরিক।

ছবিটির আবহ সংগীতের জন্য প্রথমে গানের দল পিংক ফ্লয়েডের সঙ্গে আলোচনা হয়। কিন্তু পরে শিডিউল জটিলতার কারণে তা ভেস্তে যায়। পরবর্তী সময়ে এ গুরুদায়িত্ব পড়ে অ্যালেক্স নর্থের ওপর। এর আগে তিনি কুবরিকের স্পার্টাকাস ছবির মিউজিক করেছিলেন। কিন্তু অ্যালেক্স নর্থ মুক্তির পর থিয়েটারে বসে টের পান, জোহান স্ট্রস জুনিয়রের বিখ্যাত ক্লাসিক্যাল অর্কেস্ট্রা ‘দ্য ব্লু ড্যানুবে’ আবহ সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

মোট ফুটেজের দৈর্ঘ্য ছিল ছবিতে ব্যবহৃত ফুটেজের প্রায় ২০০ গুণ। মুক্তির প্রথম নির্ধারিত দিন থেকে ১৬ মাস দেরিতে মুক্তি পায় ছবিটি।

হাড় দিয়ে পশুর কঙ্কাল ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করার সেই বিখ্যাত দৃশ্যটি বাদে পুরো চলচ্চিত্রটি ধারণ করা হয় ইংল্যান্ডের শেপারটন ও এমজিএম ব্রিটিশ স্টুডিওর ভেতরে। ৩০ টন ওজনের সেই ঘূর্ণমান ফেরির চাকা থেকে শুরু করে গোটা একশিলা স্তম্ভের সবকিছুই ছিল এক প্রকাণ্ড সেট।

বনমানুষ হিসেবে ছবিতে যাঁদের দেখা যায়, তাঁরা আসলে একদল মূকাভিনেতা। দলে দলে থিয়েটার কর্মী, নৃত্যশিল্পী, এমনকি কমেডিয়ানদের অডিশন নিয়েও যখন কুবরিকের কাউকে মনঃপূত হচ্ছিল না, তখন কোরিওগ্রাফার ড্যানিয়েল রিচারকেই বনমানুষদের প্রধান বানিয়ে দেন তিনি। ড্যানিয়েল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অঙ্গভঙ্গি নিখুঁতভাবে ধরতে চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জি ও গরিলার খাঁচার সামনে লম্বা সময় দাঁড়িয়েও থাকতে হয়েছে তাঁকে।

চলচ্চিত্রটিতে ২০৫টি স্পেশাল ইফেক্টস শট ব্যবহৃত হয়েছিল। বর্তমানের তুলনায় সংখ্যাটা খুবই কম মনে হলেও সে সময় স্পেশাল ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসে যুগান্তকারী উদ্ভাবনের জন্য ছবিটি জিতে নেয় অস্কার পুরস্কার। কাজের বেলায় খুঁতখুঁতে স্বভাবের কুবরিক নাসায় কাজ করা দুই কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করেছিলেন এই কাজে।

কুবরিক ছবিটি মুক্তির পরপরই ছবিতে ব্যবহৃত সব সেট ডিজাইনের মডেল ও অব্যবহৃত সব নেগেটিভ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করেন। যাতে ছবির কোনো কিছুই পরে অন্য কোথাও ব্যবহারের সুযোগ না থাকে। তবে ২০১৫ সালে এক ব্যক্তির মালিকানায় ছবির একটি চন্দ্রযান আবিষ্কৃত হয়। কেমন করে যেন ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল। একাডেমি অব মোশন পিকচারস মিউজিয়াম নিলামে চন্দ্রযানটি কিনে নেয়। মূল্যমান ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার।

১০

ছবিতে ব্যবহৃত ছোট্ট কালার টেলিভিশন সেটটির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? তারও প্রায় ১৬ বছর পর, ১৯৮৪ সালে জাপানিজ ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড ইপসন প্রথম বাজারে একই ধরনের পকেট সাইজ কালার টেলিভিশন সেট আনে। এমনকি সিনেমায় ব্যবহৃত স্পেস স্টেশনের সেই লাল সোফাসেটের নকশাও হয়ে উঠেছিল ভীষণ জনপ্রিয়।


গ্রন্থনা: জিনাত শারমিন