এ টি এম শামসুজ্জামানের ওষুধ কমানো হয়েছে

এ টি এম শামসুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
এ টি এম শামসুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

‘লাইফ সাপোর্টে থাকা এ টি এম শামসুজ্জামানের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার জন্য ওষুধের পরিমাণও আজ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে প্রথম আলোকে বলেন বরেণ্য এই অভিনেতার মেজ মেয়ে কোয়েল আহমেদ।

এ টি এম শামসুজ্জামান রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে অধ্যাপক রাকিব উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। তিনি আজ দুপুরে বরেণ্য এই অভিনেতার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে।

আগেই জানানো হয়েছে, আসগর আলী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে এ টি এম শামসুজ্জামানকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।

কোয়েল বলেন, ‘২৭ এপ্রিল বাবার শরীরে একটা অস্ত্রোপচার করা হয়। যদিও সফলভাবে অস্ত্রোপচার হয়, তারপরও বয়সের কারণে বাবার শরীরের আরও কিছু সমস্যা দেখা হয়। ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফুসফুসকে সুরক্ষা দিতে বাবাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বাবার কিডনি ও লিভারের অবস্থা বেশ ভালো। সবার কাছে বাবার জন্য দোয়া চাই।’

৭৮ বছর বয়সী এ টি এম শামসুজ্জামান গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সেদিন রাত ১১টার দিকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শনিবার দুপুরে তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এ টি এম শামসুজ্জামানকে।

দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যের কারণে অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও মাঝেমধ্যেই শখের বশে অভিনয় করতে দেখা গেছে এ টি এম শামসুজ্জামানকে। তাঁর অভিনীত ‘আলফা’ ছবিটি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত এই ছবিটি ২৬ এপ্রিল দেশের চারটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।

এ টি এম শামসুজ্জামান বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ লেখক ও গল্পকার। অভিনয়ের জন্য কয়েকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।

নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে এ টি এম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পোগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাইস্কুলে। তাঁর বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।

এ টি এম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতেও অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মাননা অর্জন করেন।