জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে 'বাংলাদেশ গ্যালারি'

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এটি এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের গ্যালারি রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে বেশি যোগাযোগ থাকলেও সেখানে ছিল না বাংলাদেশের কোনো গ্যালারি। দেরিতে হলেও সেখানে বাংলাদেশ গ্যালারির নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। 

প্রথম আলোকে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানালেন, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বাংলাদেশ গ্যালারি নির্মাণের প্রাথমিক কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহম্মদের নেতৃত্বে সাত সদ্যের একটি প্রতিনিধিদল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেছে। আজ সোমবার দলটি দেশে ফিরবে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ–ভারত দুই দেশের মানুষের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার জন্য কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ গ্যালারি’ নির্মাণের বিষয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সময় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল বাংলাদেশের শিলাইদহ, শাহজাদপুর এবং পতিসরে ভ্রমণ করে। এরপর তিনি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ গ্যালারি’ নির্মাণ রূপরেখা তৈরি করেন। সেই রূপরেখা ধরে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেখানে গ্যালারি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত সংস্কৃতি সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, ঠাকুরবাড়িতে অবস্থিত জাপান গ্যালারির পাশে ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ গ্যালারি’র জন্য একটি স্থান প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত হয়েছে। সেখানে ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ’ ও ‘ঠাকুর পরিবারবিষয়ক’ প্যানেল, আলোকচিত্র, বস্তুসামগ্রী ও রেপ্লিকা দিয়ে গ্যালারিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রদর্শন কক্ষের রূপ দেওয়া পরিকল্পনা আছে। এটি নির্মাণের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, সম্ভাব্য আর্থিক ব্যয় এবং বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহম্মদকে সভাপতি করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সাতজন সদস্য ২ মে কলকাতায় যান।

৬বি দ্বারকানাথ টেগোর লেনের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগ থেকে ঠাকুর পরিবারের বাসস্থান ছিল। যে জমির ওপর আজকের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে, সেই জমিটি রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদাদা দ্বারকানাথের ঠাকুরদাদা নীলমণি ঠাকুর লক্ষ্মীজনার্দন জিউয়ের নামে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে লাভ করেছিলেন বিশিষ্ট ধনী বৈষ্ণব চরণ শেঠের কাছ থেকে। এরপর অবস্থা আর একটু সচ্ছল হলে নীলমণি ঠাকুর সেই জমিতে বিরাট এক ইমারত তোলেন।

ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালির সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এই বাড়ির বাসিন্দারা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেন। তার মধ্যে সবার আগে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্তমানে এই বাড়িটি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৬২ সালের ৮ মে, রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত মহর্ষি ভবনে রবীন্দ্রনাথ শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

দুটি আর্ট গ্যালারি রয়েছে এই ভবনে, একটি প্রাচ্য আর একটি পাশ্চাত্যের ধারার। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যামিনী রায়, নন্দলাল বসুসহ আরও অনেক নামী শিল্পীর আঁকা ছবি আছে এখানে। নোবেল পুরস্কারের গ্যালারিতে ‘গীতাঞ্জলি’ ও নোবেল পুরস্কারের টুকরো গল্প ছাড়াও নাইটহুড বর্জনের কারণ বর্ণনা করে ইংরেজ সরকারকে লেখা পত্রের কপি আছে এখানে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি সপ্তাহের পাঁচ দিন ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত (সোম-শুক্র) দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। শনিবার খোলা থাকে বেলা একটা পর্যন্ত, রোববার বন্ধ।