রবীন্দ্রনাথ দেশপ্রেমে স্নাত ছিলেন, তবে...

‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০১৯’ প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ, কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম, অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল ও শিল্পী ইকবাল আহমেদ
‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০১৯’ প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ, কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম, অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল ও শিল্পী ইকবাল আহমেদ

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার মূলে ছিল আনন্দের ধারণা। যে শিক্ষা-কাঠামোয় কঠিন শাসনের পরিবর্তে ছিল উদারতার আবহ। রবীন্দ্রনাথ দেশপ্রেমে স্নাত ছিলেন, তবে কোনোভাবেই সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। তাঁর মানব ভাবনার মূলে ছিল অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব নাগরিকের সুদৃঢ় অবস্থান। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত একক বক্তৃতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

আজ বুধবার দুপুরে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০১৯’ প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। ‘রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ: শিক্ষা ও স্বদেশ ভাবনা’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

একক বক্তা অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ও স্বদেশভাবনা অনন্যতার দাবি রাখে। তাঁর শিক্ষাভাবনা ছিল প্রায়োগিক এবং বৈজ্ঞানিক। তিনি পূর্ব বাংলায় জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন কিন্তু একই সঙ্গে পালন করেছেন মানবিক আসমানদারির দায়িত্ব। বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে তাঁর ভাবনার অন্ত ছিল না। তিনি ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে তাঁর স্বদেশভূমিকে লুণ্ঠিত হতে দেখেছেন। এই লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে আত্মশক্তি জাগরণের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ স্বদেশকে নতুন করে নির্মাণের ব্রত নিয়ে আমৃত্যু সাধনা করে গেছেন।’

অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০১৯’ প্রদান করা হয়। রবীন্দ্রসাহিত্যে গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল এবং রবীন্দ্রসংগীত চর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ শিল্পী ইকবাল আহমেদকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০১৯’ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও শিল্পীর হাতে ফুলের তোড়া, সনদ, সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।

স্বাগত বক্তব্যে একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী নতুন খবর দেন। তিনি জানান, বাংলা একাডেমি পাঁচ খণ্ডের রবীন্দ্রজীবনী প্রকাশের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে তিনটি খণ্ড প্রকাশ হয়েছে। আহমদ রফিক প্রণীত ‘রবীন্দ্রজীবন’-এর বাকি দুটি খণ্ড অচিরেই প্রকাশ পাবে। হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘বাংলা একাডেমি এক দশক যাবৎ রবীন্দ্র-গবেষণা এবং রবীন্দ্রসংগীত প্রসারে অবদানের জন্য রবীন্দ্র-পুরস্কার প্রদান করে আসছে, যা এ দেশের রবীন্দ্রচর্চার প্রণোদনায় বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।’

অনুষ্ঠানে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০১৯’ পাওয়া সুধীজনেরা তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানান। বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্তি জীবনের বিশেষ অর্জন মন্তব্য করে তাঁরা বলেন, রবীন্দ্রগবেষণা ও চর্চায় তাঁদের আরও নিবিড়ভাবে নিবিষ্ট হতে সাহায্য করবে। দর্শকের অনুরোধে রবীন্দ্রপুরস্কারে ভূষিত ইকবাল আহমেদ দুটি রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে শোনান।

সাংস্কৃতিক পর্বে গান শোনান সংগীতশিল্পী শামা রহমান, রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী রুপা চক্রবর্তী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জয়ন্তী আজ। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মেছিলেন তিনি। মা সারদাসুন্দরী দেবী এবং বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেড় শ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেল তাঁর জন্মের; লোকান্তরিত হয়েছেন সেও অনেক বছর; কিন্তু বাঙালির জীবন ও মানসে তাঁর উপস্থিতি প্রতি মুহূর্ত এতই দেদীপ্যমান যে মনেই হয় না তিনি নেই। তাঁর জন্মদিন বাঙালির কাছে পরিণত হয়েছে আনন্দ উৎসবের দিনে।

আজ বুধবার সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে সেই উৎসব পালিত হচ্ছে, যার একটি ছিল বাংলা একাডেমির আয়োজন। বিকেলে জাতীয় পর্যায়ের মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে। এ ছাড়া কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করা হচ্ছে।