কাকে ভয় পেলেন হৃতিক?

হৃতিক রোশন
হৃতিক রোশন

প্রতিটি শুরুরই একটা শুরু থাকে। আমাদের এই গল্পের শুরুটা অনেক পেছনের। সেসব কথা না হয় ইতিহাস হিসেবেই থাক। গভীরে না খুঁড়ে বরং সাম্প্রতিক বিষয় দিয়েই শুরু করি। কথা ছিল, কঙ্গনা রনৌত আর হৃতিক রোশনের ছবি মুক্তি পাবে একই দিনে, ২৬ জুন। ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’র প্রযোজক একতা কাপুর যখন ছবি মুক্তির দিন পিছিয়ে ২১ জুন থেকে ২৬ জুন নিয়ে গেলেন, তখন হৃতিকের ‘সুপার থার্টি’ ছবির প্রযোজক বললেন, তাঁরা ছবি মুক্তির তারিখ পেছাবেন না। ২৬ জুনই মুক্তি পাবে ‘সুপার থার্টি’।

এরপর কঙ্গনার বোন রাঙ্গোলি জানালেন, প্রযোজক একতা কাপুর নাকি হৃতিক রোশনের সঙ্গে আলাপ করে ছবি মুক্তির তারিখ চূড়ান্ত করেছেন। অর্থাৎ রাঙ্গোলি ইঙ্গিতে বলতে চেয়েছেন, কঙ্গনার ছবির সর্বনাশ করা হৃতিকের মূল উদ্দেশ্য। আত্মবিশ্বাসী হৃতিক রোশন একই দিনে ছবি মুক্তি দিয়ে দেখাতে চান, ‘সাবেক প্রেমিকা’র সঙ্গে ছবির দৌড়ে কতটা এগিয়ে তিনি। রাঙ্গোলির এই টুইটের সঙ্গে ছিল প্রযোজক একতা কাপুরের পাল্টা টুইট। সেখানে তিনি দাবি করেন, ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’ ছবির মুক্তির তারিখ পেছানোর সঙ্গে কঙ্গনা বা হৃতিকের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা স্রেফ ব্যবসার খাতিরে করা হয়েছে।

এবার হাতে টুইটার তুলে নিলেন হৃতিক। সেখানে ঘোষণা দিলেন, ‘সুপার থার্টি’ ছবির মুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। কঙ্গনা রনৌতের ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’র সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আমি আমার ছবি “সুপার থার্টি” নিয়ে কোনো মিডিয়া সার্কাস হতে দেব না। আমি ছবি মুক্তির তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছি। ব্যক্তিগত ট্রমা আর বিষাক্ত মানসিক সংঘর্ষ এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যদিও সিনেমা মুক্তির সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, তবুও আমি আমার প্রযোজকদের অনুরোধ করেছি, তাঁরা যেন ছবি মুক্তির তারিখ পিছিয়ে নেন। যত দ্রুত সম্ভব সুবিধাজনক সময়ে মুক্তির তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।’

‘সুপার থার্টি’ ছবির দৃশ্যে হৃতিক রোশন
‘সুপার থার্টি’ ছবির দৃশ্যে হৃতিক রোশন

হৃতিক রোশনের ‘ব্যক্তিগত ট্রমা’র বিষয়টি একটু খোলাসা না করলেই নয়। ২০১৬ সালে একদিন সংবাদ সম্মেলন ডেকে কঙ্গনা হৃতিককে বললেন, ‘সিলি এক্স।’ এরপর কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। জানা যায়, একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। প্রকাশিত হয় একজন আরেকজনকে লেখা মেইল আর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের স্থিরচিত্র। কঙ্গনা একের পর এক তাঁর আর হৃতিকের সম্পর্ক নিয়ে গোপন কথা ফাঁস করেন। হৃতিক রোশন আর তাঁর বাবা রাকেশ রোশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। সেই সময় হৃতিক চলে গেছেন আড়ালে, থেকেছেন একেবারে চুপ। তবে কঙ্গনাকে মানহানির আইনি নোটিশ পাঠাতে ভোলেননি। কঙ্গনাও কম যান না। তিনিও পাঠিয়েছেন পাল্টা আইনি নোটিশ।

তখন হৃতিক-কঙ্গনার ঘটনা নিয়ে মেতে ছিল পুরো বলিউড। নীরবে দুই দলে ভাগ হয়ে যুদ্ধ চলেছিল হৃতিক আর কঙ্গনা শিবিরের ভেতর। যদিও বিভিন্ন কারণে হৃতিকের পাল্লা ভারী ছিল। বিভিন্ন কারণের ভেতর সবার ওপরের কারণটি হলো, হৃতিকের বাবার নাম রাকেশ রোশন। আর তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে বলিউডপাড়ার একটা শিশুও ধারণা রাখে। যা-ই হোক, হৃতিক বরাবরই কঙ্গনার সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে এসেছেন। বলেছেন, সেটা নাকি শুধু কঙ্গনার পক্ষ থেকেই ছিল। যুক্তি দিতে ফাঁস করেছেন কঙ্গনার পাঠানো মেইল। কঙ্গনাও কম যান না। ফাঁস করেছেন নিজেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি। সেসব নিয়ে বলিউডের আলোচনা ও গুঞ্জন কানাকানির পর্যায়ে থাকেনি। সয়লাব হয়েছে সবখানে। এবার সেসব দিনের কথা স্মরণ করে হৃতিক বললেন, ‘কয়েক বছর ধরেই আমি নীরবে দেখেছি, আমাকে নিয়ে উন্মুক্ত ও বিশ্রী হয়রানি সবাই কমবেশি উপভোগ করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমি এখনো চুপচাপ ধৈর্য ধরে সম্মিলিত সচেতনতার জন্য অপেক্ষা করছি। যাতে করে সমাজে সভ্যতা টিকিয়ে রাখা যায়। এই নির্মম অসহায়ত্ব একদিন নিশ্চয়ই শেষ হবে।’

কঙ্গনা রনৌত ও হৃতিক রোশন, মধুর সেই দিনগুলো
কঙ্গনা রনৌত ও হৃতিক রোশন, মধুর সেই দিনগুলো

রাঙ্গোলি, একতা কাপুর, হৃতিক—সবাই নিজেদের বক্তব্য টুইট করেছেন। কঙ্গনাই বা বসে থাকবেন কেন। তিনিও টুইটারে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, ‘হৃতিক রোশন, মধু মন্টেনা এবং একতা কাপুর মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, হৃতিক তাঁর ছবির তারিখ পরিবর্তন করবেন এবং একতা কাপুর ২৬ জুন ছবি মুক্তি দেবেন। গত সপ্তাহে তাঁরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি জানি না কেন তিনি “সুপার থার্টি”র মতো প্যানপেনে গল্প লিখেছেন। তবে আমি খুশি, আমার ছবি একাই মুক্তি পাচ্ছে। আমার প্রযোজক একতা কাপুরকে স্যালুট জানাই। পুরুষশাসিত সমাজে তিনি নিজের পথ খুঁজে নিয়েছেন। এটা সহজ নয়। আমি তাঁর ক্ষমতা ও সাহসের প্রশংসা করি।’