'আনারসি' আলভী

আলভী ষ ছবি: খালেদ সরকার
আলভী ষ ছবি: খালেদ সরকার

ছোটবেলায় টিভিতে নাটক-সিনেমা কিংবা প্রিয় কোনো অনুষ্ঠান দেখে সেই কাজের একটি চরিত্রে হয়ে উঠতে চাননি, এমন মানুষ হয়তো হাতে গোনাই। আর তাঁদের মধ্যে যাঁরা সত্যিকার অর্থেই বড় হয়ে তেমন একটি চরিত্র কিংবা স্বপ্নকে ছুঁয়ে যেতে পারেন, তার সংখ্যাটা হয়তো তার চেয়েও কম। অভিনেত্রী সামরোজ আজমি আলভী সেই সৌভাগ্যবতীদের একজনই বলা চলে। কুষ্টিয়ার একটি সংস্কৃতিমনা পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা আমিরুল ইসলাম সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একজন সুপরিচিত মানুষ, অভিনয়ের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় তাঁর সর্বদা বিচরণ। আর মা আশরাফুন্নাহার দিনু শিক্ষিকা।
এমন একটি পরিবারে জন্ম নেওয়া আলভীর খুব সহজেই একজন অভিনেত্রী হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু একমাত্র সন্তানের পড়াশোনা আর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাদ সাধলেন বাবা-মা দুজনেই৷ ছোটবেলায় দেখা বাংলা ছবি আলোর মিছিল দেখে যাঁর ববিতা হওয়ার স্বপ্ন, ভাত দে ছবিটি দেখে যাঁর শাবানা বনে যাওয়ার স্বপ্ন, তাঁর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে শেষ পর্যন্ত তাঁরা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। একসময়ের টিভিতে প্রচারিত ‘লাক্স আনন্দধারা’ অনুষ্ঠানটি দেখে তাঁর লাক্স তারকা হওয়ার স্বপ্ন। শুরুটাও করলেন সেই লাক্স দিয়েই। সেটা অবশ্য ২০০৭ সালের কথা। বাবা-মাকে না জানিয়েই একদিন লাক্স চ্যানেল আই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে ফেললেন। তারপর একদিন যখন তাঁর ফুপু তাঁকে গ্রুমিংয়ের জন্য গাড়িতে তুলে দিয়ে এলেন একাই, সে সময়টায় তাঁর নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছিল। প্রতিযোগিতায় পারফর্ম করার ফাঁকে ফাঁকে চুপিসারে কেঁদেছেন অনেক, বাবা-মা আর কাছের মানুষদের থেকে একা হওয়ার কষ্টে অনেক সময়েই ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছেন প্রতিযোগিতার মঞ্চ। কিন্তু নিজের সুদৃঢ় মনোবলই তাঁকে শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতার রানারআপ বানিয়ে দিল। কুষ্টিয়ার বোধন থিয়েটারে শিশুতোষ নাটকে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে অভিনেত্রীর খাতায় নাম লেখালেও লাক্স তারকা হওয়ার পরই তাঁর ক্যামেরার সামনে প্রথম অভিনয়। চলো না বৃষ্টিতে ভিজি তাঁর অভিনীত প্রথম টিভি নাটক। পরের গল্পগুলো একজন চাক্কুওয়ালির, একজন আনারসির। অভিনয়ের শুরুর দিকে পত্রমিতালি টেলিফিল্মে অভিনয়ের সুবাদে বেশ কিছুকাল ধরেই আলভী নামটি ছাপিয়ে তিনি যেমন সবার কাছে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন চাক্কুয়ালি নামে, ঠিক তেমনি সমসাময়িক কালে করা অলসপুর ধারাবাহিক নাটকটি তাঁকে দিয়েছে আনারসি উপাধি। এর মধ্যেই আলভি অভিনয় করে ফেলেছেন প্রায় ১০০টিরও বেশি নাটকে।
গ্রামীণ পটভূমির নাটকেই আপনাকে বেশি অভিনয় করতে দেখা যায়, তার কারণ কী? এমন জিজ্ঞাসায় আলভীর উত্তরটা অনেকটা রক্ষণাত্মকই৷ ‘অভিনয়ের শুরুর দিকে পত্রমিতালি টেলিফিল্মটি সম্ভবত এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। ওই নাটকে দর্শক আমাকে যেভাবে গ্রহণ করেছে, পরবর্তী নাটকগুলোয় হয়তো ঠিক তেমন চরিত্রেই দেখতে চেয়েছে। আর সে কারণে আমাকে নির্মাতারা ওই ধরনের চরিত্রেই বেশি নিয়েছেন। কিন্তু অভিজাত শ্রেণিকে কেন্দ্র করে নির্মিত গুলশান এভিনিউতে অভিনয় করে আমি মনে হয় সে ধারা থেকে নিজেকে একটু আলাদা করতে পেরেছি৷’
এ তো গেল তাঁর কাজের ফিরিস্তি, অভিনেত্রী আলভীর ব্যক্তিগত জীবনটা কেমন? ‘একদমই সাধারণ আমি। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আর আমার আত্মীয়স্বজন আমার আলভী নামের চেয়ে আমাকে টিউব লাইট, সোডিয়াম লাইট, গাধা, বলদ নামেই বেশি ডাকে। অবশ্য তার পেছনে একটা কারণও আছে। আমি সম্ভবত খুব সাদাসিধে, সহজ-সরল৷ প্যঁাচগোছ একদমই বুঝি না। সব কথাই অকপটে বলে ফেলি। সত্যি কথা বলতে কি, আমার মধ্যে লুকানোর কিছু নেই।’
বই পড়েন? কী ধরনের আর কার বই পড়তে ভালো লাগে?
ক্ষণিকের জন্য কিছুটা চিন্তিত মনে হলো তাঁকে। তারপর বললেন, ‘ছোটবেলায় কিছুটা থ্রিলার টাইপের বই পড়তে ভালো লাগত। বড় হওয়ার পর সেই পছন্দ বদলে হয়েছে সায়েন্স ফিকশনে। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই যেমন ভালো লাগে পড়তে, তেমনি সুনীলের প্রথম আলো পড়ে মনে হয়েছে, ওই বই না পড়লে জীবনটা অসম্পূর্ণ থেকে যেত।’
আর গান?
‘সব ধরনের গানই ভালো লাগে, কিন্তু ইদানীং শুভমিতার গানের প্রেমে পড়েছি, “যেভাবেই তুমি সকাল দেখো...” গানটা মন থেকে সরাতে পারি না৷’
খাবারে গরুর মাংসপ্রিয় আলভী ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন খুব। সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের যে চিত্র সাক্ষাৎকারে বর্ণনা করছিলেন, তাতে যে কারোরই সবকিছু ছেড়েছুড়ে সেন্ট মার্টিন ছুটতে ইচ্ছা করবে।
শিক্ষিকা মায়ের দেখানো পথে হেঁটে অভিনয়ের পাশাপাশি সম্প্রতি শিক্ষিকার খাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারে অতিথি শিক্ষক হয়ে কাজ করছেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করা এ অভিনেত্রী।
কথায় কথায় সন্ধ্যা নেমে এল। শেষ করতে হবে আমাদের। তাই তাঁর বর্তমান ব্যস্ততার কথা জেনে নিলাম। সেই ব্যস্ততায় কতগুলো ধারাবাহিক আর খণ্ড নাটকের সারি—অলসপুর, চতুরঙ্গ, ঝুলন্ত বাবুরা—বেশ কিছু নাটক ঝুলে আছে তাঁর আগামী সূচিতে।