সিলেটে দুর্বিন শাহ-বন্দনা

সিলেটের প্রয়াত বাউলসাধক দুর্বিন শাহর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা l প্রথম আলো
সিলেটের প্রয়াত বাউলসাধক দুর্বিন শাহর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা l প্রথম আলো

১৯৭৪ সালে কলকাতার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক তাঁর যুক্তি তক্কো আর গপ্পো চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছিলেন সিলেটের প্রয়াত বাউলসাধক দুর্বিন শাহের লেখা ‘নমাজ আমার হইল না আদায়’ শীর্ষক গানটি। দীর্ঘদিন পর আদি সুরে সেই গানটি আবার পরিবেশন করলেন প্রয়াত বাউলের ভাবশিষ্যরা।
কেবল এ গানটিই নয়, দুর্বিন শাহের লেখা এমন অনেক জনপ্রিয় গানের সুরে গতকাল রোববার বাউলদের সঙ্গে মেতে ওঠেন দর্শক-শ্রোতারাও। আর উপলক্ষ ছিল প্রয়াত বাউলের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন। ‘জ্ঞানের সাগর বাউল দুর্বিন শাহ পরিষদ’-এর উদ্যোগে সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। নগরের শাহি ঈদগাহ এলাকার জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল আলোচনা সভা। এতে উদ্বোধকের বক্তৃতা দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভেন্দু ইমাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেটের অতিরিক্ত ডিআইজি সাখাওয়াত হোসাইন, সিলেট কমার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ মোস্তাক আহমাদ দীন, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ, বাউল মকদ্দস আলম উদাসী।
দুর্বিন শাহের ছেলে আলম শাহের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচকের বক্তৃতা করেন গবেষক সুমনকুমার দাশ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বশিরউদ্দিন সরকার।
সভায় বক্তারা বলেন, সিলেটসহ সারা দেশে একসময় দুর্বিন শাহ বাউল গান পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অসংখ্য জাগরণমূলক গান পরিবেশন করে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেন। তাঁর মৃত্যুর দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হলেও জাতি তাঁর অবদানকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি। এ গুণী শিল্পীর এখন পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার না পাওয়াটা দুঃখজনক।
আলোচনা সভা শেষে আয়োজিত সংগীতানুষ্ঠানে বাউল গান পরিবেশন করেন বাউল মকদ্দস আলম উদাসী, আবদুর রহমান, বশিরউদ্দিন সরকার, শিল্পী লাভলী দেব, অতীন্দ্র দেবনাথ, শামীম আহমদ, সৌরভ সোহেল, পপি কর, শাহীনূর আলম সরকার, পথিক রাজু, বাউলিয়ানা দীপু প্রমুখ। নৃত্যশিল্পী বিপুল শর্মার পরিচালনায় ছন্দ নৃত্যালয়ের শিল্পীরা দুটি নৃত্য পরিবেশন করেন।
শিল্পীরা প্রয়াত বাউলের লেখা ‘আমি জন্মে জন্মে অপরাধী তোমারই চরণে রে’, ‘নির্জন যমুনার কূলে বসিয়া কদম্বতলে’, ‘আমার অন্তরায় আমার কলিজায়’, ‘সুখের নিশি প্রভাত হলো উদয় দিনমণি’, ‘শমন লইয়া পিয়ন খাড়া আর কত দিন দেরি’, ‘ছাড়িয়া যাইও না বন্ধু রে’, ‘কৃপাসিন্ধু দীনবন্ধু নামটি তোমার সংসারে’সহ অর্ধশতাধিক গান পরিবেশন করেন।
দুর্বিন শাহ ১৯২০ সালের ২ নভেম্বর সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়ারাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকাশিত গানের সংকলনগুলো হচ্ছে প্রেমসাগর পল্লীগীতি প্রথম খণ্ড (১৯৫০), প্রেমসাগর পল্লীগীতি দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৫০), প্রেমসাগর পল্লীগীতি তৃতীয় খণ্ড (১৯৬৮), প্রেমসাগর পল্লীগীতি চতুর্থ খণ্ড (১৯৬৮), পাক বঙ্গ ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ গীতি (১৯৭০), প্রেমসাগর পল্লীগীতি পঞ্চম খণ্ড (১৯৭৩) ও দুর্বিন শাহ সমগ্র (২০১০)।
প্রবাসীদের আমন্ত্রণে ১৯৬৮ সালে প্রয়াত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম ও দুর্বিন শাহ বিলেত সফরে গিয়ে গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। ১৯৭৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।