ওয়ারফেজের ৩০

ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য (বাঁ থেকে) বাবনা, রোমেল, কমল, টিপু, শামস ও সঞ্জয়। ছবি: খালেদ সরকার
ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য (বাঁ থেকে) বাবনা, রোমেল, কমল, টিপু, শামস ও সঞ্জয়। ছবি: খালেদ সরকার

২২ জুন ১৯৯১ সাল। নতুন একটি অ্যালবাম এল বাজারে। নাম ওয়ারফেজ। হার্ড রক আর হেভি মেটাল ধাঁচের গান। একটু অন্য রকম বাংলা গানের স্বাদ পেলেন শ্রোতারা। কিছু শ্রোতা তো শুরুতেই তা লুফে নিলেন। তবে বেশির ভাগ শ্রোতা একটু অপেক্ষা করলেন। না, বেশি দিন অপেক্ষা করতে হলো না কাউকে। অল্পদিনেই এই গান এক কান থেকে অন্য কানে পৌঁছে যায়। বাংলা হার্ড রক আর হেভি মেটাল ধাঁচের গান জনপ্রিয় হয় তরুণদের মাঝে। পাশাপাশি একটি নতুন ব্যান্ডের নাম জানতে পারে সবাই। ওয়ারফেজ। ৩০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে এই ব্যান্ডের।
৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বড় একটি কনসার্ট হবে, এমনটাই পরিকল্পনা করেছিলেন ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সবাই। কলাবাগান মাঠে হবে উন্মুক্ত কনসার্ট। তা আর হলো না। কিছু রাজনৈতিক দলের অবরোধের কারণে এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হলো। শেষ পর্যন্ত ইনডোর কনসার্টের সিদ্ধান্ত হয়।
হ্যাঁ, কাল ৩০ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির ‘গুলনকশা’ হলে হবে এই কনসার্ট। শিরোনাম ‘রবি প্রেজেন্টস থার্টিয়েথ ইয়ারস অব ওয়ারফেজ, এ লিগ্যাসি কনসার্ট’।
ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা হবে। ২৬ জানুয়ারি দুপুরে ইস্কাটন গার্ডেনে, ওয়ারফেজের প্র্যাকটিস প্যাডে। নির্ধারিত সময়ে চলে এলেন টিপু, কমল, বাবনা আর রোমেল। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর শুরু হলো আড্ডা।
এই ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কমল। তিনি ফিরে গেলেন সেই শুরু দিনগুলোয়। বললেন, ‘তখন সবাই স্কুলে পড়ছি। সেন্ট যোসেফ স্কুলের ছাত্র ছিলাম আমরা। গিটার কেনা হলো। গিটার কেনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটি ব্যান্ড গঠন করি। ১৯৮৪ সালের ৬ জুন। ৮৯ লেকসার্কাস কলাবাগান ঠিকানায় যাত্রা শুরু করে ওয়ারফেজ। তখন আমরা সবাই শিখছিলাম। আর কনসার্টে গান করি ১৯৮৮ সালে।’
ওই সময়ের আরও কয়েকটি ব্যান্ডের কথা বললেন তিনি, ‘ওই সময় হার্ড রক ধাঁচের গান করত ওয়ারফেজ, রক স্টার্টা, ইন ঢাকা আর অ্যাসেস। আমরা সবাই খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।’
টিপু বললেন, ‘শুরুতে আমরা কিন্তু বিভিন্ন দেশের হার্ড রক আর হেভি মেটাল ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান করেছি। এরপর ওয়ারফেজ অ্যালবামটি বাজারে আসার পর একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, সবাই তখন আমাদের গান শুনতে চায়। আমরাও নতুন নতুন গান তৈরি করতে থাকি। এভাবেই ক্যাটালগ বড় হতে থাকে। এখন আমরা নিজেদের গানই করছি।’
‘রবি প্রেজেন্টস থার্টিয়েথ ইয়ারস অব ওয়ারফেজ, এ লিগ্যাসি কনসার্ট’ নিয়ে টিপু বললেন, ‘এই কনসার্টের জন্য আমরা চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছি। কনসার্ট শুরু হবে বিকেল পাঁচটায়। চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। ৩০টা গান করব। কথা নয়, আমরা গানের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছি। ওয়ারফেজ ব্যান্ডের পুরোনো সদস্যরাও থাকবেন।’
কমল বললেন, ‘সবকিছুই আগের মতো হবে। তবে নাচগুলো বাদ দিয়েছি। বয়সের কারণে। তখন তো বয়স কম ছিল। মঞ্চকে আর মঞ্চ মনে হতো না।’
ততক্ষণে চলে এসেছেন সঞ্জয় আর শামস। কমলের কথা শুনে সবাই হাসলেন।
তখনো এসে পৌঁছাননি ওয়ারফেজের আরও কয়েকজন সদস্য। টিপু বললেন, ‘এই কনসার্টে আরও থাকবেন বালাম, মিজান, রজার আর সমির হাফিজ।’
ওয়ারফেজ (১৯৯১) অ্যালবামের পর এই দীর্ঘ সময়ে আরও সাতটি অ্যালবাম করেছে তারা। এই যেমন অবাক ভালোবাসা (১৯৯৪), জীবনধারা (১৯৯৭), অসামাজিক (১৯৯৮), আলো (২০০১), মহারাজ (২০০৩) ও সত্য (২০১২)। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় জনপ্রিয় হওয়া কিছু গান নতুন করে গেয়েছে ওয়ারফেজ। এই অ্যালবামের নাম পথচলা (২০০৮)।
কমল বললেন, ‘আমাদের সেই প্রথম অ্যালবাম থেকে শুরু করে প্রায় সব কটি গানই এখনো শ্রোতারা শুনতে চান। এটা কিন্তু একটা ব্যান্ডের জন্য বড় সাফল্য। আমরা এই ধারা ধরে রাখতে চাই।’
৩০ বছর পূর্তি কনসার্টের পর নতুন পরিকল্পনা করছেন ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্যরা। ওয়ারফেজের সব গান যেন দেশে ও বিদেশে শ্রোতারা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বৈধভাবে সংগ্রহ করতে পারেন, সেই উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁরা। আর শ্রোতাদের জন্য নতুন গান তো থাকবেই।