'মৃত্তিকা মায়া'র অভাবনীয় সাফল্য

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ১৭টি বিভাগে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী মৃত্তিকা মায়া ছবির দৃশ্যে অপর্ণা
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ১৭টি বিভাগে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী মৃত্তিকা মায়া ছবির দৃশ্যে অপর্ণা

২৩টি বিভাগের মধ্যে ১৭টি! তা–ও আবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এমন অভাবনীয় সাফল্যই দেখিয়েছে চলচ্চিত্র মৃত্তিকা মায়া। ছবিটির পরিচালক গাজী রাকায়েত। ২০১২ সালের সরকারি অনুদানে নির্মিত এই ছবিটি ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ১৭টি বিভাগে পুরস্কার জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। 

সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ বিভাগে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছে মৃত্তিকা মায়া। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়। আজ দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মৃত্তিকা মায়া যেসব বিভাগে পুরস্কার জিতেছে সেগুলো হচ্ছে—সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা গল্প, সেরা সংলাপ, সেরা চিত্রনাট্য, সেরা অভিনেতা (তিতাস জিয়া), সেরা অভিনেত্রী (শর্মীমালা), সেরা পার্শ্ব অভিনেতা (রাইসুল ইসলাম আসাদ), সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (অপর্ণা ঘোষ), খল চরিত্রে সেরা অভিনেতা (মামুনুর রশীদ), সেরা আবহ সংগীত (এ কে আজাদ), সেরা চিত্রগ্রাহক (সাইফুল ইসলাম বাদল), সেরা সম্পাদনা (শরীফুল ইসলাম রাসেল), সেরা শিল্প নির্দেশক (উত্তম গুহ), সেরা পোশাক পরিকল্পনা (ওয়াহিদা মল্লিক জলি), সেরা শব্দগ্রহণ (কাজী সেলিম) এবং সেরা রূপসজ্জা (মোহাম্মদ আলী বাবুল)। এর মধ্যে সেরা অভিনেত্রী ও সেরা আবহ সংগীত বিভাগে যৌথভাবে পুরস্কার অর্জন করেছেন মৌসুমী (দেবদাস) ও শওকত আলী ইমন (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী)। 

মৃত্তিকা মায়া ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন চারুনীড়ম অডিও ভিজ্যুয়াল ও ফরিদুর রেজা সাগর।
মৃত্তিকা মায়ার পরিচালক গাজী রাকায়েত ছবিটির এমন সাফল্যে দারুণ উচ্ছ্বসিত। তিনি বললেন, ‘আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না, কী বলে আনন্দ প্রকাশ করব। ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বলতে পারেন, একটা কঠিন দায়িত্ববোধের মধ্যে পড়ে গেলাম।’

ছবির এমন অর্জন প্রসঙ্গে গাজী রাকায়েত বললেন, ‘আমরা শুরু থেকে চমৎকার একটা কাজ করার চেষ্টা করেছি। সবাই সৎ ছিলাম। পরিশ্রম করেছি। মাথার মধ্যে শুধু কাজ করেছে, কীভাবে একটি ভালো মানের ছবি নির্মাণ করা যায়। চলচ্চিত্র বানাতে যা যা দরকার, তার কোনোটিতে ছাড় দেইনি। একটা চলচ্চিত্রের সবাই যে মন দিয়ে কাজ করেছে, তার প্রমাণ ১৭টি পুরস্কার অর্জন। এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। আমি অনেক খুশি।’

মৃত্তিকা মায়া ছাড়া এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে অন্য বিভাগ থেকে যাঁরা পুরস্কার অর্জন করেছেন তাঁরা হলেন সেরা গায়ক (চন্দন সিনহা), সেরা গায়িকা (যৌথভাবে রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীন), সেরা সুরকার (কৌশিক হোসেন তাপস), সেরা গীতিকার (কবির বকুল), শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র (কামার আহমেদ সাইমন, শুনতে কী পাও)। পুরস্কার পাওয়া অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী একই বৃত্তে এবং শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার পায় অন্তর্ধান চলচ্চিত্রটি। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র শাখায় যৌথভাবে পুরস্কার পান ফরিদুর রেজা সাগর। এ বছর আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীকে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৩–এর জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান ও এফডিসির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হারুন-অর-রশীদ জানান, এবার জমা পড়েছিল মোট ২৮টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ২৩টি পূর্ণদৈর্ঘ্য, ৩টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ২টি প্রামাণ্য। পুরস্কারের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে গেলেও এবার জমা পড়া ছবিগুলোর মান বেশ ভালো ছিল। ২০১৩ সালের চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ৩টি শাখায় কোনো পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করা যায়নি। এগুলো হচ্ছে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা।