লাইফ সাপোর্টে নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন

শহীদুল ইসলাম খোকন
শহীদুল ইসলাম খোকন

গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকনকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন।
মুখগহ্বরের মোটর নিউরো ডিজিসে (এএলএস) আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সরকারও এই গুণী নির্মাতার উন্নত চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে। তাঁকে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়েছিল। নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানোর পর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, এ রোগের নিরাময় সম্ভব নয়। এর পর তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
আজ সোমবার দুপুর একটার দিকে নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী বড় বোন রুমা আজাদ। তিনি বলেন, ‘আজ সকাল নয়টার দিকে খোকনের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। আমরা সবাই তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকের পরামর্শে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে দ্রুত লাইফ সাপোর্টে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
অক্টোবরের শেষ দিকে দেশে ফেরার পর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ডা. আরেফিনের তত্ত্বাবধানে শহীদুল ইসলাম খোকনের পেটে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউব স্থাপন করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন তিন সন্তানের জনক। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কিছুদিন আগে। অন্য ছেলে ও মেয়ে পড়াশোনা করছে। উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে থাকেন তাঁরা।

শহীদুল ইসলাম খোকন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অন্যতম গুণী ও মেধাবী নির্মাতা। চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অভিনয় করলেও চলচ্চিত্র নির্মাণই তাঁর প্রথম পছন্দ, তার প্রমাণ রেখেছেন তিনি। অভিনেতা ও প্রযোজক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার সহকারী হিসেবে তাঁর চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু হয়েছিল। দশ বছর ধরে তিনি সোহেল রানার সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ‘রক্তের বন্দী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে খোকন তাঁর পরিচালনার অধ্যায় শুরু করেন। কিন্তু ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফলতা পায়নি। শহীদুল ইসলাম খোকনের পরিচালনায় নির্মিত দ্বিতীয় ছবিটিও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর রুবেলকে নিয়ে খোকন তৈরি করেন ‘লড়াকু’। এই ছবিটি ব্যবসায়িক সফলতা পায়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
মার্শাল আর্ট ভিত্তিক এবং অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করে শহীদুল ইসলাম খোকন বাংলা চলচ্চিত্রে অনেক নতুন মুখ হাজির করেন। এদের মধ্যে ড্যানি সিডাক, সিরাজ পান্না, ইলিয়াস কোবরা, চিত্রনায়িকা মিশেলা, হুমায়ূন ফরীদি অন্যতম। সমাজের সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং বিরোধী শক্তির অপচেষ্টাকে খোকন তাঁর চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছেন নানাভাবে। ১৯৯২ সালে ‘উত্থান পতন’ চলচ্চিত্রে খোকন অভিনয়ও করেন। পরবর্তীতে পরিচালনায় প্রতিষ্ঠা লাভ করলে আর অভিনয়ে ফিরে যাওয়া হয়নি তার। শহিদুল ইসলাম সাচ্চু পরিচালিত ‘মেগাবন্ড’, সৌরজয় চৌধুরী পরিচালিত ‘অবশেষে নাটকে পরিণত হলো’ নাটকে অভিনয় করেন।
শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ‘ঘাতক’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘লাল সবুজ’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘ভণ্ড’, ‘লড়াকু’, ‘বীরপুরুষ’, ‘বজ্রমুষ্টি’, ‘বিপ্লব’, ‘অকর্মা’, ‘সতর্ক শয়তান’, ‘বিষদাঁত’, ‘টপ রংবাজ’, উত্থান পতন’।