ভারতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হচ্ছে আজ

সীমান্তে ২০১১ সালে ফেলানীকে হত্যার পর কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা হয় ফাইল ছবি
সীমান্তে ২০১১ সালে ফেলানীকে হত্যার পর কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা হয় ফাইল ছবি

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী হত্যার বিচার আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে। ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের গঠিত বিশেষ আদালতে এই বিচারকাজ চলবে। বিচার পরিচালনা করবেন আইজি পদমর্যাদার ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তা।বিচারকাজের শুরুতে ভারতের সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। ১৯ আগস্ট সাক্ষ্য দেবেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আবদুল হানিফ। তাঁদের সহায়তা দিতে বিজিবির ৪৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক ও কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্রাহাম লিংকন সেখানে উপস্থিত থাকবেন। তাঁরা চারজনই ১৮ আগস্ট ভারতে যাবেন।জানতে চাইলে পিপি আব্রাহাম লিংকন প্রথম আলোকে বলেন, ফেলানীকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা ছিল মানবাধিকারের চরমতম লঙ্ঘন। প্রায় ৪৩ বছর পর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা আর গুলি করবে না। এই বিচার দুই দেশের জন্যই মাইলফলক হয়ে থাকবে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারতের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে।ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসএফ মোর ছাওয়া গুলি করি মারছে। কোনো দিন ভাবতে পারি নাই বিচার হইবে। মুই হত্যার বিচার চাই।’ফেলানীর মামা আবদুল হানিফ বলেন, ‘এখনো চোখের সামনে ফেলানীর লাশ ভাসে। কাঁটাতারে ঝুলে আছে। সুষ্ট বিচারের আশায় ভারত যাইতাছি। নিজ চোখে যা দেখছি তাই কমু।’ প্রথমবারের মতো এ ধরনের বিচার শুরু হওয়ার সংবাদটি সীমান্তবাসীর মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। বেরাকুটিহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাই ফেলানী হত্যার সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হোক।’ কলোনটিরি গ্রামের আবেদ আলী (৪০) বলেন, ‘ছোট থাইকা দেখতাছি বিএসএফ মানুষ মাইরা ফেলায়, বিচার হয় না। দেহি এইবার কী হয়?’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ফেলানী তার বাবার সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছিল। কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে ফেলানী নিহত হয়। তার লাশ পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশ ও বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাধ্য হয়ে বিএসএফ নিজস্ব আদালতে এ ঘটনার জন্য দায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। বাবার সঙ্গে ফেলানী নয়াদিল্লিতে গৃহকর্মীর কাজ করত। বিয়ের উদ্দেশে সে দেশে ফিরছিল।

এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের সঙ্গে অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসএফ সদর দপ্তর ফেলানী হত্যার ঘটনা তদন্ত করে বিচারের জন্য ‘জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্ট’ গঠন করে। পরে ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে বিজিবির একজন প্রতিনিধি, সরকারের একজন আইনজীবী ও দুজন সাক্ষী আহ্বান করে।