বড় কুবো বা কানাকুয়া

কিশোরগঞ্জে একটি ধানখেত থেকে বড় কুবোর ছবিটি সম্প্রতি তোলা ষ ছবি: লেখক
কিশোরগঞ্জে একটি ধানখেত থেকে বড় কুবোর ছবিটি সম্প্রতি তোলা ষ ছবি: লেখক

আমাদের দেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির পাখির বাস। এসব পাখির চেহারা ও স্বভাবে যেমন ভিন্নতা আছে, তেমনি অঞ্চলভেদে পাখির নামের ক্ষেত্রেও আছে ভিন্নতা। যেমন বরিশালে যে পাখিটিকে মানুষ কাঠশালিক বলে চেনে, সুনামগঞ্জে গিয়ে জেনেছি তারা এ পাখিকে বলে তেলঢুপি। আবার তিলা ঘুঘু পাখিকে সেখানকার লোকজন বলে ঢুপি। কিন্তু তেলঢুপি আর ঘুঘু আলাদা পরিবারের পাখি। আবার আমরা যে পাখিকে হলদে পাখি বলে জানি, দেশের কোথাও কোথাও এ পাখিকে বলা হয় ইষ্টিকুটুম, বেনেবউ।এ রকম একটি পাখি বড় কুবো। অঞ্চলভেদে এ পাখি কানাকুয়া, কুক্কা ও কুকো নামে পরিচিত। বাংলাদেশে মাত্র দুই প্রজাতির কুবো আছে। বাংলা কুবো ও বড় কুবো।কুবো মাঝারি গড়নের ভূচর পাখি। এদের লম্বা ও শক্তিশালী পা এবং লম্বা লেজ থাকে। এরা উড়তে পটু নয়। ছেলে ও মেয়েপাখি দেখতে একই রকম।বড় কুবো কালো ও তামাটে রঙের লম্বা লেজওয়ালা পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ৪০ সেমি, ওজন ২৫০ গ্রাম। পিঠ তামাটে ও দেহতল চকচকে কালো। উজ্জ্বল তামাটে কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা ছাড়া পুরো দেহই কালো। চোখ লাল, ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখর কালো।বড় কুবো আলোকময় বন, বাগান ও মানববসতির কাছাকাছি বাস করে। সাধারণত একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। মাটিতে ধীরে ধীরে হেঁটে শিকার খোঁজে। ঝোপের তলায় তলায় ঘুরে ওরা যখন খাবার খোঁজে, তখন দীর্ঘ পুচ্ছটি প্রায় মাটি ছুঁয়ে থাকে। বিপদের টের পেলে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে, কখনো ছোট দূরত্বে উড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে বাঁশবনে। বেশ গভীর ও সুরেলা কণ্ঠে ধীরে ধীরে উক ..উক শব্দে ডাকে। অন্য রকম একটি ডাকও শোনা যায়। খুব দ্রত সংগীতের ঝংকারের মতো কুপ..কুপ..কুপ করে ছয়-সাতবার ডাকে। গরমের দিনে বহুদূর থেকে ওদের ডাক শোনা যায়।

এদের খাবার তালিকায় আছে শামুক, ব্যাঙ, পোকামাকড়, টিকটিকি, সাপ, পাখির ডিম, ছানা, ইঁদুর ইত্যাদি। ভূচর এ পাখি ওড়ার চেয়ে দৌড়াতে বেশ পটু। ঘন ঝোপ, বাঁশবন ও খেজুরগাছের আগায় পেয়ালার মতো বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় তিন-চারটি।

বড় কুবো বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। বনপ্রান্তে ও গ্রামাঞ্চলে এদের ঢের দেখা যায়।