নওয়াজের পদত্যাগ দাবিতে অনড় বিরোধী এমপিরা

নওয়াজ শরিফ ও  ইমরান খান
নওয়াজ শরিফ ও ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অর্থ পাচারের অভিযোগে ক্ষমতা থেকে সরানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণ এ মুহূর্তে হাতে নেই বলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলেও তাঁর পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছেন বিরোধীদলীয় এমপিরা। আলোচিত পানামা পেপারস নথিতে নওয়াজ পরিবারের কথিত অবৈধ সম্পদের উল্লেখ নিয়ে গতকাল শুক্রবার পার্লামেন্টে তুমুল হইচই ও ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেন বিরোধী এমপিরা।

বিরোধী এমপিরা পার্লামেন্ট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের পদত্যাগের এক দফা দাবি করা ছাড়াও গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদ জানান। আদালত আরজি অনুযায়ী নওয়াজকে ক্ষমতায় থাকার অযোগ্য ঘোষণা না করে এ জন্য যথেষ্ট প্রমাণ নেই উল্লেখ করে অভিযোগ আরও খতিয়ে দেখতে যৌথ তদন্ত দল গঠনের আদেশ দেন।

পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বিরোধীদলীয় এমপিরা সমস্বরে দাবি জানিয়ে বলেন, ‘চলে যাও নওয়াজ, চলে যাও।’ তাঁরা অধিবেশনের কার্যসূচির কাগজ ছিঁড়ে ফেলেন।  একপর্যায়ে ওয়াকআউট করেন বিরোধী এমপিরা।

ইসলামাবাদে গতকালই বিরোধী দলগুলো এক বৈঠকে বসার পর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও জামায়াত-ই-ইসলামি (জেআই) পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের দাবি তুলে ধরে।

পিটিআইয়ের প্রধান ইমরান খান ঘোষণা দেন, তদন্ত চলাকালে নওয়াজ যাতে ক্ষমতায় না থাকেন, সে দাবিতে পিটিআই আগামী সপ্তাহে রাজধানীতে সমাবেশ করবে।

বিরোধীদলীয় নেতাদের সমালোচনার বাণের তোড়ে নওয়াজের পিএমএল-এন দৃশ্যত রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। দলটির নেতা দানিয়েল আজিজ বিরোধী দলের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ অর্থ পাচারে জড়িত নন। আজিজ উল্টো অভিযোগ করেন, পিটিআই-প্রধান ইমরান খান তাঁর সম্পদ গোপন ও কর ফাঁকি দিয়েছেন।

পিপিপির জ্যেষ্ঠ নেতা খুরশিদ শাহর সভাপতিত্বে গতকাল সকালে এক বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতারা ‘পানামাগেট’ নামে পরিচিত হওয়া এ কেলেঙ্কারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ব্যাপারে আলোচনা করেন। এ বৈঠকেই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলার এবং পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়।

যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পিপিপির আইনপ্রণেতা আইতজাজ আহসান ও খুরশিদ শাহ। এ সময় তাঁরা বিদেশে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তে যৌথ তদন্ত দল গঠনে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের সঙ্গে নওয়াজ শরিফের যোগাযোগ রয়েছে। শাহ প্রশ্ন করে বলেন, একজন কর্মচারী কীভাবে তাঁর নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করতে পারেন?

এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে আইতজাজ আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পিপিপি নতুন কৌশল গ্রহণ করবে। অন্যদিকে আওয়ামী মুসলিম লিগের (এএমএল) সভাপতি শেখ রশিদ সরকারের বিরুদ্ধে বৃহৎ জোট গঠন করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) গত বছরের এপ্রিল মাসে পানামার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার এক কোটির বেশি নথি ফাঁস করে। এসব নথিতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের অনেক তারকার অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। ফাঁস হওয়া ওই নথি থেকে দেখা যায়, নওয়াজ শরিফ, তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ, ছেলে হাসান ও হুসেইন নওয়াজ একাধিক লেনদেনের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাঠিয়েছেন।