যুক্তরাজ্যে নির্বাচন: অভিবাসন নিয়ে আবার বিতর্ক

নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টি আবারও অভিবাসন বিতর্ক তাতিয়ে দিল। গত সাত বছর ক্ষমতায় থেকে অভিবাসী কমিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণে চরমভাবে ব্যর্থ হয় দলটি। অথচ আগামী ৮ জুনের নির্বাচন সামনে রেখে তারা আবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ক্ষমতায় ফিরলে যুক্তরাজ্যের মোট অভিবাসন বছরে এক লাখের নিচে নামিয়ে আনবে।

বছরে যে পরিমাণ বিদেশি যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে এবং যুক্তরাজ্য ত্যাগ করে, তার পার্থক্যকে বলা হচ্ছে মোট অভিবাসন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ইশতেহার ঘোষণার পর থেকে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসে অভিবাসন। দলটি বলেছে, সামাজিক বিভাজন কমাতে এবং নাগরিকদের কর্ম সুরক্ষায় বিদেশিদের আগমন ঠেকাতে হবে। সর্বশেষ প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে মোট অভিবাসন ছিল ২ লাখ ৭৩ হাজার। প্রশ্ন উঠেছে, গত সাত বছর ক্ষমতায় থেকে যে প্রতিশ্রুতি পূরণ করা গেল না; তা আবার নবায়নের রহস্য কী?

এমন প্রশ্নের সোজা কোনো জবাব ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে মিলছে না। বৃহস্পতিবার রাতে বিবিসির এক অনুষ্ঠানে কনজারভেটিভ পার্টির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন বলেন, মোট অভিবাসন কমিয়ে আনাই তাঁদের লক্ষ্য। তবে কবে এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে তার সুনির্দিষ্ট সীমা তিনি দিতে পারেননি। বাজেট গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অফিস ফর বাজেট রেসপনসিবিলিটি’ বেশ আগেই সতর্ক করে দিয়েছে যে প্রতি জন অভিবাসী কমার একটা প্রভাব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পড়বে। তাহলে কনজারভেটিভ পার্টির প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে রাজস্ব আয়ের ক্ষতি কতটা হবে—এমন প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেননি ফ্যালন। এদিন যুক্তরাজ্যের টেলিভিশনগুলোর নির্বাচনী আলোচনা সরগরম ছিল অভিবাসন নিয়ে।

যুক্তরাজ্যে নির্বাচন এলেই অভিবাসন বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ডানপন্থীরা দেশের সব সমস্যার দায় বিদেশিদের ওপর চাপিয়ে অভিবাসনবিরোধী মানসিকতা উসকে দেয়। ডানপন্থী ভোটারদের আকর্ষণে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতির টোপ ফেলে। অভিবাসন-বিরোধিতাকে পুঁজি করে ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসা কনজারভেটিভ পার্টি এবারও তা-ই করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিরোধী দল লেবার পার্টি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো সংখ্যা বেঁধে দিতে রাজি নয় তারা। বরং পারিবারিক ভিসার আয়ের শর্ত শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি।

এদিকে আজ শুক্রবার ‘গ্লোবাল ফিউসার’ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (থিংকট্যাংক) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে হলে যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর কমপক্ষে দুই লাখ অভিবাসীর আগমন প্রয়োজন। শ্রমিকের অভাব, চিকিৎসার মতো বিশেষ বিশেষ খাতে দক্ষ জনবল-সংকট এবং প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বিপরীতে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমতে থাকার কারণে যুক্তরাজ্যকে অভিবাসনের দ্বার খোলা রাখতে হবে। ১৯৫০ সালে দেশটিতে কর্মজীবী মানুষের (১৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সী) বিপরীতে প্রবীণদের (৬৫ থেকে বেশি বয়সী) হার ছিল সমান সমান (৫.৫)।
২০১৫ সালে এসে প্রতি তিনজন কর্মজীবীর বিপরীতে প্রবীণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে (৩.৫)। ২০৫০ সালে যুক্তরাজ্যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ এবং ৮৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানের চেয়ে তিন গুণ হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো অভিবাসনের প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা নিয়ে সত্য কথা বলছে না বলে অভিযোগ করা হয় এই প্রতিবেদনে।