নওয়াজ শরিফের পদত্যাগ

নওয়াজ শরিফ। ছবি: এএফপি
নওয়াজ শরিফ। ছবি: এএফপি

সর্বোচ্চ আদালতে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিলেন নওয়াজ শরিফ। আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করেন। পাকিস্তানের ডন নিউজ অনলাইনে এ কথা জানানো হয়।

পানামা পেপারসে ফাঁস হওয়া তথ্যে জানা যায়, নওয়াজ (৬৭) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। এ অভিযোগের তদন্ত করতে আদালতের নির্দেশে যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠন করা হয়। জেআইটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁদের নামে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদের উৎস জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত আজ নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেন। নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতের রায়ের কিছুক্ষণ পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের ঘোষণা আসে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে নওয়াজের পদত্যাগের কথা জানানো হয়।

নওয়াজ পদত্যাগ করলেও তাঁর দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ক্ষমতায় থাকছে। এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে হবে দলটিকে। দলটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি ও সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা অবশ্য শুরু থেকেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রায় ঘোষণায় বিচারপতি ইজাজ আফজাল খান বলেন, ‘নওয়াজ শরিফ এখন পার্লামেন্টের সদস্য পদে অযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যও অযোগ্য তিনি।’ অ্যাটর্নি জেনারেল আসতার আউসাফ জিও নিউজকে বলেন, নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে আজীবনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

পাকিস্তানের জিও নিউজের খবরে বলা হয়, পাঁচজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দিয়েছেন। আদালতের আদেশে নওয়াজ শরিফ, তাঁর মেয়ে মরিয়ম, ছেলে হুসেইন ও হাসানের বিরুদ্ধে রেফারেন্স উল্লেখ করে তা জবাবদিহি আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী মুসলিম লিগের প্রধান শেখ রাশেদ ও জামায়াতে ইসলামির প্রধান সিরাজুল হকের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নওয়াজের অর্থ পাচারের অভিযোগের শুনানি শুরু হয় পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে। গত এপ্রিলে আদালত বলেন, নওয়াজকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ নেই। এ সময় আদালত প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের দাবির পক্ষে তথ্য সংগ্রহ করতে যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠনের আদেশ দেন। আদালতের দেওয়া আজকের রায়ে নওয়াজের জামাতা মুহাম্মদ সফদারকে জাতীয় পরিষদের সদস্য পদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকেও।

নওয়াজের ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, এটা নওয়াজকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র। ২০১৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ। এর আগের দুইবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান নওয়াজ। প্রথমবার ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ এবং দ্বিতীয়বার ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালেও দুর্নীতির দায়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় নওয়াজকে।

গত বছর পানামাভিত্তিক আইনি সেবাপ্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি প্রকাশ করে। তাতে বিশ্বের বহু ক্ষমতাধর, ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ সামনে আসে; যা বিশ্বে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি নামে পরিচিতি পায়। এরই নথিতে নওয়াজ ও তাঁর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনজনের নাম আসে।