সিরিয়ার জটিল যুদ্ধ কী প্রভাব ফেলবে?

নিজেদের ‘রাজধানী’ সিরিয়ার রাকা থেকে বিতাড়িত হয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শহরটি এখন মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রণে। এসডিএফ মূলত কুর্দি ও আরব যোদ্ধাদের জোট। সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক বৈরী ভাবাপন্ন। এর মধ্যে রাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট কুর্দি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া সিরিয়ার জটিল যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে? যুদ্ধে অংশ নেওয়া বিভিন্ন গোষ্ঠীকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?

এসডিএফ চার মাস ধরে রাকায় অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এই অভিযান কিংবা বিজয় নিয়ে চুপ ছিল সিরিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলো। এর আগে রাকায় মার্কিন সমর্থনপুষ্ট জোটের অভিযানকে ব্যর্থ হিসেবে সমালোচনা করে আসছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হুভার ইনস্টিটিউশনের ভিজিটিং ফেলো ফ্যাবরিস ব্যালান্স সিরিয়া বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তাঁর মতে, রাকা পুনর্দখল আসলে খুব একটা কাজে আসবে না। কারণ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে রাকার কৌশলগতভাবে খুব একটা গুরুত্ব নেই; বরং পাশের দেইর ইজর শহর তেলসমৃদ্ধ এবং সেটির আঞ্চলিক গুরুত্ব অনেক।

রাকার পর আইএসের কাছ থেকে দেইর ইজর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট এসডিএফ। কিন্তু এই প্রচেষ্টায় বেশ এগিয়ে গেছে রাশিয়া-সমর্থিত সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। তারা ইরাকের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে দেইর ইজরের বহু এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।

সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস দেইর ইজরের কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে লড়াইয়ে নেমেছে, কিন্তু এতে খুব একটা লাভ আসবে না বলে মনে করেন ফ্যাবরিস ব্যালান্স। কারণ সিরিয়ার সরকারি বাহিনী শিগগিরই শহরের পূর্বাঞ্চল ও ইরাক সীমান্তবর্তী এলাকা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে। এর ফলে মার্কিন-সমর্থিত বাহিনীর অগ্রযাত্রার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।

দামেস্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের পরিচালক বাসাম আবু আবদুল্লাহ বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অগ্রাধিকার পরিষ্কার। তারা দেইর ইজরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আলবু কামাল দখল করতে চায়, যা সিরিয়া-ইরাকের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত।

২০১১ সালে সিরিয়ার বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের সময় কুর্দিরা চুপ ছিল। তারা তখন নিজেদের আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো বিনির্মাণে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা যখন নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করতে চাইল, তখনই খেপে গেল সিরিয়া এবং প্রতিবেশী দেশ তুরস্ক।

আটলান্টিক কাউন্সিলের রফিক হারিরি সেন্টারের সিনিয়র ফেলো অ্যারোন স্টেইন বলেন, এসডিএফ সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব যোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে রাকায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করবে, নাকি নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

আবু আবদুল্লার মতে, পুরো সিরিয়ায় নিজেদের কর্তৃত্ব চাইবে কেন্দ্রীয় সরকার। সিরিয়া সরকার সমান্তরাল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন সহ্য করবে না। এসডিএফ এমনই একটি সংগঠন।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ২০১৪ সাল থেকে ওয়াশিংটনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। শুরুতে তারা বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বাহিনীকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য মূলত জঙ্গিদের দমন এবং ওই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব সীমিত রাখা। একটা পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি সিরিয়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে কুর্দি যোদ্ধারা দামেস্ক ও আঙ্কারায় অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়বে।