চীনে নারী নেতা 'নেই' কেন?

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ছবি: রয়টার্স
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ছবি: রয়টার্স

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চলছে কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম জাতীয় কংগ্রেস। এতে দলের প্রধান ও দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দলের নতুন নেতৃত্বকে পরিচয় করিয়ে দেবেন বিশ্বের সঙ্গে। কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে কারা থাকবেন, এটাই এখন অন্যতম আলোচনার বিষয়। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত যে সেখানে কোনো নারী থাকবেন না।

চীনে কখনো কোনো নারী প্রেসিডেন্ট হননি। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশ পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় দলের স্ট্যান্ডিং কমিটি। সেখানেও কখনো কোনো নারীর ঠাঁই হয়নি। ২৫ সদস্যের পলিটব্যুরোতে এখন রয়েছে মাত্র ২ জন নারী, যাঁরা এ বছরই অবসরে যাবেন।

চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং এবং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তাইওয়ানের শাসনক্ষমতায় রয়েছেন নারী। অথচ চীনের নেতৃত্বে নারী নেই বললেই চলে। এর কারণ কী?

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও বিপ্লবী মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক নেতা মাও সে-তুং নারী ও পুরুষের সমগুরুত্বের কথা বলেছিলেন। তাহলে তাঁর মৃত্যুর চার দশক পরও দেশটির রাজনীতির উঁচু আসনে নারীর সংখ্যা এত কম কেন? এর কারণ হতে পারে—

বৈষম্যমূলক নীতি

চীনের সংবিধানে লৈঙ্গিক সমতার কথা বলা হয়েছে। এরপরও সেখানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের পুরুষদের তুলনায় আগে অবসরে যেতে হয়। পুরুষ চাকুরেদের অবসরের বয়সসীমা যেখানে ৬০, নারীদের সেখানে ৫০ অথবা ৫৫।

বিশেষজ্ঞদের মত হলো, অবসরের এই বয়সসীমাই বলে দেয়, চীনা কর্তৃপক্ষ মনে করে যে পুরুষদের তুলনায় নারীরা অনেক আগে কাজ করার শারীরিক সামর্থ্য হারায়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের কথা চিন্তা করে নারীর নিয়োগদান প্রক্রিয়াকেও সেখানে নিরুৎসাহিত করা হয়। এ কারণেই রাজনীতিতে নারীদের এগোনো কঠিন হয়ে পড়ে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ব্রুকলিন ইনস্টিটিউশনের চীনা বিশেষজ্ঞ চেং লি বলেন, ‘মাও নারীদের উৎসাহ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বেশি দূর এগিয়ে যেতে দিতে চাননি।’

বাইজিউ সংস্কৃতি

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চীনা নারীদের যেতে না পারার আরেকটি অন্যতম কারণ দেশটির সংস্কৃতি। দেশটির পুরুষশাসিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যেকোনো ভোজসভা ও বৈঠকে পুরুষেরা প্রচুর পরিমাণে বাইজিউ পান করেন। বাইজিউ এক ধরনে সুরা। পানাহারের এই রীতিই নারীদের দ্বিধায় ফেলে যে এটি তাঁরা পান করবেন কি না। কারণ এটি পান করলে মনে করা হবে যে তাদের জীবনধারা সংযত নেই। আবার পান না করলে তাঁরা প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনের সুযোগ হারাবেন।

নারীবাদবিরোধী মনোভাব

পশ্চিমা দেশগুলোতে নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের জন্য নারীবাদী কর্মকাণ্ড প্রশংসিত হচ্ছে। রাজনীতিবিদেরা সেগুলোতে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু চীনে তেমনটা হচ্ছে না। এমনকি নারীবাদে সমর্থন করার বিষয়টি নিয়েও সেখানে বিতর্ক আছে।

গত বছর চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার এক নিবন্ধে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের চরমপন্থী মনোভাবের’ সমালোচনা করা হয়েছে, কারণ তিনি অবিবাহিত বলে। এতে বলা হয়, অবিবাহিত নারী রাজনীতিবিদ বলে তাঁর ভালোবাসা, পরিবার কিংবা সন্তান-সন্ততি নিয়ে মানসিক আবেগের জায়গা নেই। এ জন্যই তাঁর রাজনীতির ধরন ও কৌশল চরমপন্থী মনোভাবের।

 চীনে ২০১৫ সালে গণপরিবহনে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সরব হতে কর্মসূচির আয়োজন করতে চাওয়ায় পাঁচজন নারীবাদী কর্মীকে আটক করা হয়। ওই নারীরা ছাড়া পেলেও এখনো তাঁরা দেশটির সন্দেহভাজন অপরাধী হিসেবেই গণ্য।