চীনে এবার সি'র চিন্তাধারা

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ছবি: রয়টার্স
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ছবি: রয়টার্স

মাও সে-তুংয়ের পর চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। চীনের গঠনতন্ত্রে কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাওয়ের নামের পাশে ঠাঁই হয়েছে দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক চিন পিংয়ের নাম। এর আগে চিন পিংয়ের নাম ও মতাদর্শকে চীনের গঠনতন্ত্রে সন্নিবেশিত করার পক্ষে ভোট দেয় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্রমাগতভাবে ক্ষমতা সুসংহত করছেন চিন পিং। গঠনতন্ত্রে সি চিন পিংয়ের নাম যুক্ত করার ফলে ২০২২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ‘শীর্ষ নেতা’ হিসেবেই থাকবেন তিনি।
কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসকে চীনের রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বলে মনে করা হয়। রাজধানী বেইজিংয়ে গত ১৮ অক্টোবর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম জাতীয় কংগ্রেস শুরু হয়। সপ্তাহব্যাপী কংগ্রেসটির গতকাল ছিল সমাপনী দিন।
বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে আয়োজিত পার্টি কংগ্রেসে প্রায় ২ হাজার ৩০০ প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, দলীয় গঠনতন্ত্রে চিন পিংয়ের নাম ও চিন্তাধারা স্থান দিতে কারও আপত্তি আছে কি না। সমস্বরে উত্তর আসে ‘না’। এর ফলে এখন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি কোম্পানি ও কারখানার কর্মীদের ‘সি চিন পিংয়ের চিন্তাধারা’ পাঠ করতে হবে।
চীনের গঠনতন্ত্রে চিন পিংয়ের নাম সন্নিবেশিত করার ফলে, প্রতিদ্বন্দ্বীরা কমিউনিস্ট পার্টির শাসনকে হুমকিতে ফেলা ছাড়া অন্য কোনোভাবে সি চিন পিংকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না।
এর আগে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা তাঁদের মতাদর্শ দলের গঠনতন্ত্রে যুক্ত করেছেন। কিন্তু দলটির প্রতিষ্ঠাতা মাও সে-তুং ছাড়া আর কেউই তাঁদের মতাদর্শ ‘চিন্তাধারা’ হিসেবে গঠনতন্ত্রে সন্নিবেশিত করেনি। গঠনতন্ত্রে মতাদর্শের পাশে মাও ছাড়া কেবল দেং জিয়াওপিংয়ের নাম যুক্ত হয়। যদিও জিয়াওপিংয়ের নাম গঠনতন্ত্রে তাঁর মৃত্যুর পরেই যুক্ত হয়েছিল।
সির পূর্বসূরি জিয়াং জেমিন ও হু জিনতাও তাঁদের মতাদর্শ গঠনতন্ত্রে যুক্ত করেন। তাও আবার নিজেদের দুই মেয়াদ শেষে। কিন্তু তাঁরা কেউই নিজেদের নাম এতে যুক্ত করেননি।
বলা হচ্ছে, যদি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি চেয়ারম্যান মাওয়ের আমলকে গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় হিসেবে মনে করা হয় এবং দেং জিয়াওপিংয়ের আমলকে মনে করা হয় চীনের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার সময়। তবে বর্তমান যুগ হবে নিজ দেশে ও বিদেশে চীনকে আরও ঐক্য ও সম্পদে পরিপূর্ণ করার সময়।

নতুন যুগ
পার্টি কংগ্রেসে ২০৪ সদস্যের নতুন সেন্ট্রাল কমিটি নির্বাচিত করা হয়েছে। এতে রয়েছে মাত্র ১০ জন নারী সদস্য। এই কমিটিই পার্টির নতুন কাউন্সিল অর্থাৎ পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি নির্বাচিত করবে আজ বুধবার। সি চিন পিং দ্বিতীয় মেয়াদে পার্টির সাধারণ সম্পাদক হবেন—এটি প্রায় নিশ্চিত এবং তিনি মিত্রদের দিয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটি ভরিয়ে ক্ষমতা দৃঢ় করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। পার্টির কংগ্রসের উদ্বোধনীতে সি বলেছিলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ ‘বিশ্বের নেতা’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চীন ‘নতুন যুগে’ প্রবেশ করেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট এমন একটা সময়ে চীনের বৈশ্বিক নেতা হওয়ার স্বপ্নের কথা বললেন, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’
নীতি নিয়ে সামনে এগোতে চাইছেন এবং যুক্তরাজ্যও যখন চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দেশটির বেরিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ বাস্তবে
রূপ দিতে।
চিন পিংয়ের লক্ষগুলোর মধ্যে একটি হলো ২০৩৫ সাল নাগাদ চীনে আধুনিক সেনাবাহিনী গড়া। যেটি তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ারও বেশ পরে। তাই মনে করা হচ্ছে, চিন পিং দ্বিতীয় মেয়াদের পরেও ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন—এটি তারই ইঙ্গিত।

চীনের নেতা সি চিন পিং
বয়স ৬৪ বছর
* ২০১২ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন। তখন থেকেই দলের নেতৃত্ব তাঁর হাতে
* ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই তাঁর হাতে ক্ষমতা
রাজনীতি
* প্রতিযোগী অংশগুলোর মাঝে সমঝোতার মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসেন সি চিন পিং
* কয়েক দশকের মধ্যে চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা মনে করা হয় তাঁকে। গণমাধ্যমের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন এবং মানবাধিকারকর্মীদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছেন
* ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর উচ্চপর্যায়ের ‘বাঘ’ এবং নিম্ন পর্যায়ের ‘মাছি’র বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেন
* চীনের ‘নতুন যুগে’ প্রবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। এই শতকের মাঝামাঝিতে ‘বিশ্বনেতা’ হওয়ার প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন
সুনাম
* জনসম্মুখে উপস্থিতির ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ
* চীনের নবযাত্রার আহ্বান জানিয়েছেন