নিউজিল্যান্ডকে বদলে দিতে চান জাসিন্ডা

বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। এএফপির ফাইল ছবি।
বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। এএফপির ফাইল ছবি।

নিউজিল্যান্ডে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ৩৭ শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছে লেবার দল। এ দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন জাসিন্ডা আরডার্ন। নির্বাচনে জয়ী দল ন্যাশনাল পার্টির মন জয়ের চেষ্টা করেননি জাসিন্ডা; বরং ঝুঁকেছেন কম গুরুত্বপূর্ণ পপুলিস্ট দলের দিকে। একই সঙ্গে জোটে না থাকা গ্রিনসদেরও সমর্থন পেয়েছেন।

জাসিন্ডা নির্বাচনে পরাজিত কোনো দল থেকে এই প্রথমবার সরকার গঠন করলেন। স্থান করে নিলেন সমানুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্বমূলক পার্লামেন্টে। বলা হচ্ছে, বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী নেতাও হলেন। মাত্র ৩৭ বছর বয়স তাঁর। গত ২৬ অক্টোবর শপথ নিয়েছেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের নির্বাচনের ইতিহাসে বেশ বদল ঘটিয়েই ক্ষমতায় এলেন জাসিন্ডা। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন সে দেশের তরুণ প্রজন্মকেও।

এর কারণও রয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা ন্যাশনাল পার্টির কর্মকাণ্ডে ক্লান্তিবোধ করছিল নিউজিল্যান্ডবাসী। মনে মনে পরিবর্তন চেয়েছে তারা। আর তাই বেছে নিয়েছে নবীন জাসিন্ডাকে।

বিশ্লেষকদের মতে, তিন দশক ধরে চলা উদার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবসান কাম্য ছিল নিউজিল্যান্ডের মানুষের। অর্থনীতিকে নিতে চেয়েছে রক্ষণশীলতার দিকে। আর সেই পথে তাদের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছেন জাসিন্ডা।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই জাসিন্ডার লেবার দল পপুলিস্টদের সঙ্গে নিয়ে নিউজিল্যান্ডে অভিবাসী আসার হার কমিয়ে বছরে ৩০ হাজারে আনতে চেয়েছেন। বিদেশিদের কৃষিজমি কেনাবেচায় নিয়ন্ত্রণ আনতে, ট্রান্সপ্যাসিফিক পার্টনারশিপ নিয়ে আবার আলোচনা, মুক্তবাণিজ্য, বিদেশিদের বাড়ি কেনাবেচার ওপর লাগাম টানাতেও রাজি হয়েছে দুই দল।

কেন জাসিন্ডার পাশে আছেন, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পপুলিস্ট নেতা উইন্সটন পিটার। বলেছেন, বেশির ভাগ নিউজিল্যান্ডবাসী বুঝতে পেরেছে, ক্রমবর্ধমান পুঁজিবাদ তাদের বন্ধু নয়, শত্রু। লেবার দলও একই মনোভাব পোষণ করে। তাই তিনি তাদের পাশে থাকতে চান।

পিটারের এই বক্তব্যের সত্যতাও রয়েছে। এটা সত্যি নিউজিল্যান্ড অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ দেশ। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি যে হারে ঘটেছে, সে হারে বেতন–ভাতা বাড়েনি কর্মীদের। অনেকেই তাতে হতাশ। আয় না বাড়লেও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।

দেশের বহু সংস্কৃতি নিয়ে গর্বিত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষোভও রয়েছে নিউজিল্যান্ডবাসীর। অভিবাসীদের তোড়ে অনেকেই বিরক্ত। বছরে অভিবাসী আসার হার ৭০ হাজার ছুঁই ছুঁই। ২০০৮ সালের তুলনায় এই হার ১৬ গুণ বেশি। ঘরবাড়ির দাম বাড়ার কারণে অভিবাসীদের এই হিড়িককে দায়ী করেন অনেকে।

অভিযোগ আরও রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের জাতীয় সম্পদ পর্যটকদের ভিড়ের কারণে নষ্ট হতে চলেছে বলেও মন্তব্য অনেকের।

অভিবাসীবিরোধী বলে জাসিন্ডার দিকে অভিযোগের তির ছুড়তে চেয়েছে অনেকে। তবে তাদের অভিযোগ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন জাসিন্ডা। জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থান কম যোগ্যতাসম্পন্ন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। পপুলিস্টরাও এই ইস্যুতে জাসিন্ডার পাশে। লেবার দলকে সমর্থন দেওয়ার পুরস্কার হিসেবে পপুলিস্টরা ক্যাবিনেটে পেয়েছে চারটি আসন। পপুলিস্ট দলের পিটার একই সঙ্গে উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিল ইংলিশ এখন বিরোধী দলের নেতা। নির্বাচনে তাঁর ন্যাশনাল পার্টি পেয়েছে ৪৪ শতাংশ ভোট। জাসিন্ডার সরকারের কাছে ন্যাশনাল পার্টি যেকোনো সময় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, জাসিন্ডা সরকারের বেশির ভাগ মন্ত্রীর অভিজ্ঞতা কম। জোটগতভাবেও তাঁরা দুর্বল। তার ওপর জাসিন্ডা এক লাখ ঘরবাড়ি নির্মাণ, শিশু দারিদ্র্য দূরীকরণ, দূষিত নদী শোধনের মতো উচ্চাভিলাষী কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এগুলো পূরণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এটা ঠিক, ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছেন জাসিন্ডা। সংখ্যাগরিষ্ঠ নিউজিল্যান্ডবাসীকেও একসূত্রে বাঁধতে পেরেছেন। কিন্তু তাঁর সামনে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে শুভা জিনিয়া চৌধুরী