মন পড়ছে বিজ্ঞাপন

ক্যামেরা সংযুক্ত বিশেষ চশমা পরে পণ্য দেখছেন একজন ক্রেতা। ৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের নরওয়াকের একটি বিপণিবিতানে l ছবি: এএফপি
ক্যামেরা সংযুক্ত বিশেষ চশমা পরে পণ্য দেখছেন একজন ক্রেতা। ৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের নরওয়াকের একটি বিপণিবিতানে l ছবি: এএফপি

মানুষের মন পড়ে ফেলছে বিজ্ঞাপনদাতারা। সে অনুযায়ী সম্ভাব্য ক্রেতার সামনে হাজির করছে পণ্যের বিজ্ঞাপন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোখের নড়াচড়া, অভিব্যক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এসব করা হচ্ছে।

পণ্য কেনার সময় ক্রেতার সিদ্ধান্ত আসলে যুক্তি আর আবেগের যুগপৎ ক্রিয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে মস্তিষ্ক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। কাজেই একজন ক্রেতা কী কিনতে চলেছেন, আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন। ঠিক এই কারণেই বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপ চালিয়ে সাফল্য পেলেও তাতে সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতেই প্রযুক্তির দ্বারস্থ হচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতারা।

গেজেট ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনদাতারা সম্ভাব্য ক্রেতার চোখের নড়াচড়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়টাতে চেহারার অভিব্যক্তি, এমনকি ঘাম বা মস্তিষ্কের কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণ করছে। সত্তরের দশকে প্রথম এই কৌশল অবলম্বন করে বিজ্ঞাপন নির্মাণ শুরু হয়। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে এখন এর ব্যবহার আরও বেড়েছে।

চোখের নড়াচড়া পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রস্তুত ক্যামেরা লাগানো চশমা পরিয়ে দেওয়া হয় ভোক্তাকে। বিপণিবিতানে কোনো পণ্যের ওপর সেই ভোক্তা কতক্ষণ তাকিয়ে থাকেন, সে সময় চোখ কীভাবে নড়াচড়া করে, তা পর্যবেক্ষণ করে এই চশমা। ঘাম পর্যবেক্ষণে কখনো কখনো ত্বকে সংযোজন করা হয় বিশেষ সেনসর। এ ছাড়া ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফির (ইইজি) সাহায্যে মস্তিষ্কের কার্যক্রম শনাক্ত করা হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডিজিটাল বিপণন সংস্থা আইসোবারের একটি শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসিকা আজৌলে বলেন, ‘এমন না যে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে নেওয়া সিদ্ধান্তটির কারণ মানুষ আপনাকে বলবে না। ভোক্তা আসলে তাঁর সিদ্ধান্তের কারণটা নিজেই সুস্পষ্টভাবে বলতে পারেন না।’

ঠিক এই কারণেই প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতারা। এ ব্যাপারে ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক পরামর্শক ও বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইপসসের একটি বিভাগের প্রধান নির্বাহী এলিসা মোসেস বলেন, প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার ফলে তাঁরা এখন বিভিন্ন ধরনের আবেগজনিত তথ্য ধারণ করতে পারছেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রযুক্তির এই ব্যবহার বেশ সহায়ক হচ্ছে। এতে কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে, তা নিশ্চিত হয়ে আরও কার্যকরভাবে বিজ্ঞাপন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অ্যালার্জির ওষুধের প্রচারে এই সমস্যার লক্ষণগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে, নাকি ওষুধ সেবনের পর স্বস্তিটাকে প্রাধান্য দিতে হবে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে।