স্বাধীনতার নায়কের এমন বিদায়!

রবার্ট মুগাবের এমন বিদায়ের পেছনে স্ত্রীর অবদান কম নয়! গত ২ জুন এক অনুষ্ঠানে স্ত্রী গ্রেস মুগাবের সঙ্গে l ছবি: রয়টার্স
রবার্ট মুগাবের এমন বিদায়ের পেছনে স্ত্রীর অবদান কম নয়! গত ২ জুন এক অনুষ্ঠানে স্ত্রী গ্রেস মুগাবের সঙ্গে l ছবি: রয়টার্স

হিসাবটা কষতে সামান্য ভুল করেছিলেন তিনি। আর করবেনই বা না কেন? ক্ষমতার দর্পে এবং নিজ দলের চাটুকারিতায় আচ্ছন্ন ছিলেন বলে কথা। কথা হচ্ছিল জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে নিয়ে। ‘দলীয় বোঝায় পরিণত’ হওয়া বর্ষীয়ান (৯৩) এই নেতা একদা এমনও মন্তব্য করেছিলেন, ঈশ্বর ছাড়া কেউই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবেন না। কিন্তু ইতিহাস ভবিষ্যতে সাক্ষী দেবে, তাঁর আগমন যতটা বীরোচিত, বিদায় ততটাই পরিহাসের।

শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা স্বাধীনতা আন্দোলনের এই নেতা টানা ৩৭ বছর ধরে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন। দেশটির অবিসংবাদিত এই নেতা হয়ে উঠেছিলেন জিম্বাবুয়ের অবিচ্ছেদ্য এক নাম। সমালোচনা রয়েছে, তিনি এমন এক নায়ক, যিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে একটি দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর তাঁর সবশেষ ভুলটি হলো, নিজ উত্তরসূরি হিসেবে নিজের চেয়ে বয়সে প্রায় ৪০ বছরের ছোট স্ত্রী গ্রেসকে বসানোর চিন্তা করা। এতেই কাল হয় তাঁর। যেই নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ভর করে ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলেন, সেই তারাই তাঁকে সরাতে গত ১৪ নভেম্বর ঘটায় ‘রক্তপাতহীন এক ব্যতিক্রমী অভ্যুত্থান’।

তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশই মনে করে যে জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন রবার্ট মুগাবে। তাই তো তাঁর বিদায়ে তরুণসহ বেশির ভাগ পেশাজীবী রাজপথে নেমে উচ্ছ্বাস করেছেন। জনতার মত, এর মধ্য দিয়ে দেশটির কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটেছে।

সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর অভিশংসনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন মুগাবে। দেনদরবার করে দায়মুক্তির শর্তে পদত্যাগে রাজি হন তিনি। সেই সঙ্গে জীবনভর পেয়ে যাবেন বেতন-ভাতা। পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাবেন জীবনভর নিরাপত্তাও। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় বছরে দেড় লাখ ডলার পেতেন মুগাবে, যা বাকি জীবন পেতে থাকবেন। পাশাপাশি পদত্যাগের প্যাকেজ হিসেবে এক কোটি ডলারের বেশি দেওয়া হবে প্রেসিডেন্ট দম্পতিকে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকের স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক রবার্ট মুগাবে ১৯৯৬ সালে গ্রেস মুগাবেকে বিয়ে করেন। সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো, মুগাবের প্রতি সম্মান জানাতে ভোলেননি নতুন প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগোয়া। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘মুগাবে স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। খুবই জটিল সময়ে দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।’