শিশুরা যুদ্ধের নিষ্ঠুর শিকার

শিশুদের করুণ চিত্র তুলে ধরতে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরা হয়। ছবি: ইউনিসেফ
শিশুদের করুণ চিত্র তুলে ধরতে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরা হয়। ছবি: ইউনিসেফ

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে শিশুদের ব্যবহার বাড়ছে। যোদ্ধা ও আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে শিশুদের নিয়োগও উদ্বেগজনক। সহিংস এলাকায় মানবঢাল হিসেবে শিশুদের ব্যবহারের ‘নিষ্ঠুর’ বছর ছিল ২০১৭ সাল। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ নিয়ে এক বিবৃতি প্রকাশ করে ইউনিসেফ। সেখানে বলা হয়েছে, সহিংসপূর্ণ এলাকায় বিবদমান গোষ্ঠীগুলো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে যথেচ্ছভাবে এবং শিশুদের রক্তক্ষয়ী হামলার কাজে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘাতপূর্ণ ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান ও মিয়ানমারে শিশু ধর্ষণ, জোরপূর্বক বিয়ে, অপহরণ ও দাসত্বপ্রথা সাধারণ কৌশল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কিছু শিশু জঙ্গিগোষ্ঠীর থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ফের ধর্ষণের শিকার হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে। যুদ্ধের কারণে সরাসরিভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে অন্য শিশুরাও। এ ছাড়া যুদ্ধের কারণে ত্রাণকর্মীরা পৌঁছাতে না পারায় যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় খাদ্য, পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে সেখানকার শিশুরা অপুষ্টি ও নানান রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

ইউনিসেফের জরুরি সেবা বিভাগের পরিচালক ম্যানুয়েল ফুতেন বলেন, ‘শিশুদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে ও হামলা চালানোর কাজে এবং বাড়ি, স্কুল, খেলার মাঠের নৃশংস সহিংসতায় তাদের উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।’

ম্যানুয়েল ফুতেন আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর এ রকম হামলার ঘটনা ঘটছে। আমরা এই ঘটনা বাড়তে দিতে পারি না।’
শিশুদের এই করুণ চিত্র তুলে ধরতে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ নাইজার, চাদ, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুনে অন্তত ১৩৫ শিশুকে জোরপূর্বক আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে ব্যবহার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম, যা অন্য সময়ের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। কঙ্গোতে রাজনৈতিক ও জঙ্গি সহিংসতায় ঘরছাড়া হয়েছে সাড়ে ৮ লাখ শিশু। সোমালিয়ায় চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ১ হাজার ৮০০ শিশুকে যুদ্ধে নিযুক্ত করা হয়েছে জোর করে। ইয়েমেন তিন বছরের যুদ্ধে অন্তত ৫ হাজার শিশু নিহত বা আহত হয়েছে এবং ১৮ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
ইউনিসেফ আরও বলেছে, সিরিয়া ও ইরাকে মানবঢাল হিসেবে প্রতিনিয়ত শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ যাচ্ছে শিশুদের। স্নাইপারদের লক্ষ্যবস্তুতেও পরিণত হচ্ছে তারা। এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসের যুদ্ধে প্রায় ৭০০ শিশু নিহত হয়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শিশুরা সহিংসতার কবলে পড়ে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে, যাদের অনেকের বয়সই ১৮ বছরের নিচে।