কাতারে কমেছে বাংলাদেশি কর্মী

কাতারে বাংলাদেশি কর্মী আসার সংখ্যা ২০১৬ সালের তুলনায় বিগত ২০১৭ সালে কমেছে। পুরুষ ও নারী—উভয় কর্মীর ক্ষেত্রে চিত্র একই। কাতারে নির্মাণাধীন অধিকাংশ প্রকল্প শেষ হওয়ার পথে থাকায়, নতুন অদক্ষ কর্মীর চাহিদা কমায় এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কাতারে বাংলাদেশি কর্মী আসার সংখ্যা কমার এই চিত্র দেখা গেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালে কাতারে মোট পুরুষ কর্মী এসেছেন ৭৭ হাজার ১৪৫ জন। আর নারী কর্মী এসেছেন ৩ হাজার ২৪ জন, যার মোট সংখ্যা ৮০ হাজার ১৬৯। তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কাতারে ২০১৭ সালে পুরুষ ও নারী কর্মী মিলিয়ে ৮২ হাজার ১২ জন এসেছেন।
দূতাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে এসেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৩৮২ জন। তবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মী এসেছেন ২০১৫ সালে, এ সংখ্যা ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৬৫। এর আগে কয়েক বছরের মধ্যে ২০১৪ সালে ৮৭ হাজার ৫৭৫ জন, ২০১৩ সালে ৫৭ হাজার ৫৮৪ জন, ২০১২ সালে ২৮ হাজার ৮০১ জন এবং ২০১১ সালে ১৩ হাজার ১১১ জন এসেছেন।
প্রতিবেদনে নারী গৃহকর্মীদের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৭ সালে কাতারে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী এসেছেন ৩ হাজার ২৪ জন। এর আগের বছর ২০১৬ সালে এসেছিলেন ৫ হাজার ৩৮১ জন। তবে সবচেয়ে বেশি এসেছেন ২০১৫ সালে। ওই বছর এসেছিলেন ৮ হাজার ৬৪২ জন। এর আগের ২ বছরে ২০১৪ সালে ৬ হাজার ৪৫২ জন ও ২০১৩ সালে ২ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী কাতারে এসেছেন।
দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, কাতারে যেসব নির্মাণাধীন বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই এখন শেষের পথে। ফলে এসব প্রকল্পে এত দিন অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা থাকলেও এখন শেষ হওয়ার পর এসব প্রকল্পের কারিগরি কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণে জন্য দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে বলে তাঁরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর ড. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে কাতারে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের ৮০ ভাগই অদক্ষ জনশক্তি। আর বাস্তবতা হলো, কাতারে অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা কমছে, বাড়ছে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা। কিন্তু বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কাতারের এই খাতের চাহিদার সঙ্গে নিজেদের এখনো খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাশাপাশি কাতারের নতুন অভিবাসন নীতিও বাংলাদেশি জনশক্তি আসার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। এই নীতি অনুসারে কাতারে নতুন প্রকল্পে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুনভাবে কর্মী না এনে বর্তমানে কর্মরত কর্মীদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে নতুন নতুন প্রকল্পে আগের মতো বিপুলসংখ্যক কর্মী আনার বিষয়টি পাল্টে যাচ্ছে।
তবে শ্রম কাউন্সেলর ড. সিরাজুল ইসলাম আরেকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘২০১৭ সালের জুন মাস থেকে কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবসহ তার কয়েকটি মিত্রদেশের অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে কাতারে নিয়োগকর্তারা ধীরগতিতে এগোচ্ছেন বলে আমরা মনে করছি। এ বিষয়টিও কর্মীসংখ্যা কম আসার ব্যাপারে প্রভাব ফেলছে।’
আর নারী গৃহকর্মী কম আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শ্রম কাউন্সেলর বলেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে কেবল কাতারে নারী গৃহকর্মীদের বেতন অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি। তবে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের জন্য নতুন শ্রমবাজার চালু হওয়ায় সেখানে বেশির ভাগ নারী চলে যাচ্ছেন। এর ফলে কাতারে আগমনের হার কিছুটা কমেছে।
শ্রম কাউন্সেলর আরও বলেন, সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের বেলায় নিয়োগকর্তারা জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে সার্ভিস চার্জ দেয়, সেটি কাতারের নিয়োগকর্তাদের দেওয়া সার্ভিস চার্জের চেয়ে বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কাতারের চেয়ে সৌদি আরবে নারীদের পাঠাতে বেশি আগ্রহী।
কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা মনে করি, কাতারের বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধ একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু এটাই মূল কারণ নয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং আশা করছি ২০১৮ সালে কাতারে বাংলাদেশি কর্মীর আগমন আরও বাড়বে।’
দীর্ঘদিন ধরে কাতারে বসবাসরত কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে শ্রম সম্পর্ক জোরদার করতে সরকারিভাবে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে তাঁরা মনে করেন। পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তিতে বাংলাদেশ দূতাবাস নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে সুফল মিলবে বলে আশা করেন তাঁরা।