কাতারে সরাসরি বিনিয়োগের সুবিধা পাবেন বিদেশিরা

কাতারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি খসড়া আইনে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ৩ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ আইন পাস হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কাতারের অধিকাংশ খাতে সরাসরি বিনিয়োগ এবং প্রতিষ্ঠানের শতভাগ মালিকানা লাভ করতে পারবে।
৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি। বৈঠকে বিদেশি বিনিয়োগ-সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়। এ আইন ২০০০ সালে প্রণীত বিদ্যমান আইন-১৩-কে প্রতিস্থাপন করবে। আইন-১৩ বিদেশি বিনিয়োগের বিধিবিধান বর্ণনা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে তা আগের আইনটির স্থলাভিষিক্ত হবে। ৩ জানুয়ারি প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা তা উপদেষ্টা পর্ষদে পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠায়।
বৈঠকে খসড়া আইনটি উত্থাপন করে অর্থনীতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কাতারের অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে আনা এ আইনের খসড়ার শুরুতেই বিদেশি বিনিয়োগ ও কাতারের বাইরের পুঁজির বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। মূলত ২০১৪ সালের পর তেলের দাম পড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কাতারের বাজেটে যে ঘাটতি দেখা যায়, তা কাটাতেই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুমোদিত খসড়া আইন অনুযায়ী, কাতারের ব্যাংক, ইনস্যুরেন্সসহ আর্থিক খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে। তবে আবাসন ও নিজস্ব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কোনো বিনিয়োগ করা যাবে না। এ দুই খাত ছাড়া কাতারের অর্থনীতির প্রায় সব খাতেই বিনিয়োগ করতে পারবে বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তবে সব ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে।
বর্তমানে কাতারে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১৪ সালে পাসকৃত একটি আইন অনুসৃত হয়। এ আইন অনুযায়ী, কাতারের শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশের মালিক হতে পারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। নতুন খসড়া আইনে এ অর্থনীতির একটি বড় ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনকি শতভাগ বিনিয়োগের সুযোগও থাকছে। মূলত চার আরব দেশের আরোপিত অবরোধ মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই কাতার নিজের অর্থনীতির দরজা খুলে দেওয়ার এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে এএফপির প্রতিবেদনে।
গত বছরের জুনে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন চার আরব দেশ। একই সঙ্গে দোহার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধ করে দেশগুলো। এ অবস্থায় প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে কাতারের সার্বভৌম তহবিল থেকে দেশটির আর্থিক খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। পরবর্তী সময়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি ও নতুন বাজার খোঁজায় তৎপর হয় কাতার।

একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণেরও প্রয়োজন অনুভব করে দোহা, যার অংশ এ খসড়া আইন।

৩ জানুয়ারি খসড়া আইনে অনুমোদনের পর অর্থনীতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং কর থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন আইনটি করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্য বৈশ্বিক পরিসরে কাতারের অর্থনীতিকে আরও উচ্চতর স্থানে নিয়ে যাওয়া।
এ বিষয়ে অর্থনীতিমন্ত্রী শেখ আহমেদ বিন জসিম বিন মোহাম্মদ আল থানি দ্য পেনিনসুলাকে বলেন, আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নির্দেশে অর্থনীতি ও বাণিজ্যের প্রায় সব ক্ষেত্রে শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে খসড়া আইনটি করা হয়েছে।
অর্থনীতিমন্ত্রী বলেন, খসড়া আইনটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে, বিশেষ করে বিনিয়োগ সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কাতার চায় বিনিয়োগ নিরাপত্তা ও আস্থা সূচককে বিশ্বমানে নিয়ে যেতে, যাতে বিনিয়োগকারীরা এখানে পুঁজি লগ্নি করতে স্বস্তিবোধ করে। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভূমি বরাদ্দসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধারও প্রস্তাব করা হয়েছে আইনে। নির্ধারিত বিধি ও শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি লগ্নির বিপরীতে এসব সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এমনকি উৎপাদন খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুযায়ী বিনা শুল্কে পণ্য আমদানির সুযোগও রাখা হয়েছে এতে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রেও শুল্ক-সুবিধা পাবে বিনিয়োগকারীরা।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, অর্থনীতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রিসভা নির্ধারণ করবে। এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পাবে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী। জনস্বার্থ ছাড়া অন্য কোনো কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই অধিগ্রহণ করা হবে না। আর এমন কোনো পদক্ষেপ নিলেও সে ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ প্রত্যাহার, অন্য দেশে স্থানান্তর কিংবা অন্য কারও কাছে বিক্রির সুযোগও রাখা হয়েছে আইনটিতে। এ ছাড়া শ্রম অসন্তোষ ছাড়া অন্য যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তিতে আপসরফার সুযোগও থাকছে। তবে যেকোনো ক্ষেত্রেই পরিবেশ সুরক্ষা, নিরাপত্তা, দূষণরোধ-সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকছেই।