রাজনীতিতে মেয়েকে উত্তরসূরি করছেন নওয়াজ!

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ দেশটির আগামী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ দেশটির আগামী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ দেশটির আগামী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো আজ শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মরিয়ম নিজে কোনো মন্তব্য করেননি।

ডনের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-নওয়াজ) কিছু বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে লাহোরে বাবার আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মরিয়ম নওয়াজ। এ ছাড়া প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনেও প্রচারাভিযানে অংশ নেবেন তিনি।

আগামী সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মরিয়ম নওয়াজ এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি। ৪৪ বছর বয়সী মরিয়ম ১৯৭৩ সালে লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সাল থেকেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন তিনি। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে মাঠপর্যায়ের রাজনীতির প্রতিই তাঁর আগ্রহ ছিল বেশি।

২০১৬ সালের পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির পর থেকে মরিয়মের নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হতে থাকে। তখন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, বাবা নওয়াজ শরিফের অপ্রদর্শিত সম্পদের মালিকানায় আছেন মরিয়ম।

গত বছরের জুলাই মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। এরপরই রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন মরিয়ম। গত বছর উপনির্বাচনে মা বেগম কুলসুম নওয়াজের হয়ে প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এবার দলের হয়ে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছে দল-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র।

গত বছরের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে নওয়াজ শরিফের বহিষ্কারের পরই রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন মরিয়ম। ছবি: রয়টার্স
গত বছরের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে নওয়াজ শরিফের বহিষ্কারের পরই রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন মরিয়ম। ছবি: রয়টার্স

পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বাবা নওয়াজ শরিফের নির্বাচনী আসনে প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছিলেন মরিয়ম। এবার লাহোরের সেই আসন থেকেই নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে তাঁর।

অবশ্য সমালোচকেরা বলছেন, রাজনৈতিক দলে কখনোই কোনো পদে ছিলেন না মরিয়ম। সুতরাং তাঁর রাজনীতির কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। তাই মরিয়ম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার এই ঘাটতি বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নওয়াজ শরিফ ও তাঁর ভাই শাহবাজ শরিফের পর পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) উত্তরসূরি হওয়ার পথে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন মরিয়ম। এ ক্ষেত্রে ঢের পিছিয়ে আছেন মরিয়মের ভাইয়েরা এবং তাঁদের চাচাতো ভাই হামজা শরিফ।

মোট তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ। গত বছর প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেওয়ার পর দলীয় রাজনীতিতে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে ভাই শাহবাজ শরিফকে বেছে নেন তিনি। ইতিমধ্যে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিজ দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে শাহবাজের নাম ঘোষণা করেছেন নওয়াজ। তবে মরিয়ম তাঁরা বাবার আসন থেকে নির্বাচন করছেন—এ খবরে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের পরও পিএমএল-এনের প্রধান হিসেবে আছেন নওয়াজ শরিফ। শাহবাজকে দলীয় প্রধানের পদে নিয়োগ না দেওয়ায় ভাইয়ে ভাইয়ে আস্থার ঘাটতি আছে বলে মনে করেছিলেন অনেকে। তবে আসন্ন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে শাহবাজ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় দুই ভাইয়ের সম্পর্কে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। মরিয়মের নির্বাচনে অংশগ্রহণের খবরে সেই সম্পর্কে ফের ফাটল ধরে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।