বালির প্রাসাদের এক রাজা

বালির প্রাসাদের রাজা মার্সিউ মাতোলিস। ছবি: এএফপি
বালির প্রাসাদের রাজা মার্সিউ মাতোলিস। ছবি: এএফপি

মাথায় মুকুট, হাতে রাজদণ্ড, কী নেই এই রাজার? তবে তাঁর প্রাসাদটা অন্যরকম। বালি দিয়ে তৈরি। হ্যাঁ, সত্যিকারেই তিনি বালির প্রাসাদে বাস করেন। আর এই বালির প্রাসাদের রাজা মার্সিও মাতোলিয়াস। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে বাহা দা চিঝুকা সাগরসৈকতে দেখা মিলবে এই রাজার।

চাইলেই হাসিমুখে প্রাসাদের সামনে পর্যটকদের সঙ্গে ছবি তোলেন মাতোলিয়াস। এই রাজা কিন্তু কাজও করেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সযত্নে বেলচা দিয়ে প্রাসাদের মেরামতকাজ করেন, ভঙ্গুর বালুর প্রাসাদ যাতে ঝড়-তুফানে ভেঙে না যায়।

রিওর পশ্চিমে বাহা দা চিঝুকা সাগরসৈকত সম্পদে ভরপুর। সেখানেই মাতোলিয়াস গড়েছেন বালির প্রাসাদ। কাছেই সাগর। জানুয়ারি মাসের প্রচণ্ড গরমে সাগরে স্নান করছিলেন অনেকে। তাঁদের ভাষ্য, ২২ বছর ধরে নিজের তৈরি প্রাসাদে বাস করছেন মাতোলিয়াস।

৪৪ বছরের মাতোলিয়াস প্রাসাদ ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারেন না। তাই ভঙ্গুর এই প্রাসাদ টিকিয়ে রাখতে কোদাল, ছুরি নিয়ে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যান।

মাতোলিয়াস আনন্দের সঙ্গে বলেন, ‘সাগরের সামনে বসবাসের জন্য লোকেদের অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হয়। কিন্তু আমার কোনো ভাড়া লাগে না। আমি এখানে আনন্দেই থাকি।’

মাতোলিয়াস অবিবাহিত। সঙ্গে আর কেউ নেই। তাঁর প্রাসাদভরা বই। গলফ ক্লাবে যাওয়া এবং মাছ শিকার করা তাঁর শখ।

প্রাসাদের ভেতরে কোথায় ঘুমান মাতোলিয়াস? মাটিতেই স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে কাজটা সেরে নেন। তাঁর শৌচাগার? ৩০ মিটার দূরে জেলেঘাটের একটি বাথরুম ব্যবহার করেন। মাত্র ১ ডলারে গোসলও করা যায়।

প্রাসাদের মেরামতকাজ করছেন মার্সিউ মাতোলিস। ছবি: এএফপি
প্রাসাদের মেরামতকাজ করছেন মার্সিউ মাতোলিস। ছবি: এএফপি

ছোটখাটো এসব সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামান না মাতোলিয়াস। তবে যখন খুব গরম পড়ে, তখন কষ্টটা বেড়ে যায়। সূর্যের তাপে বালু খুব গরম হয়ে যায়। তখন আর প্রাসাদের ভেতরে ঘুমাতে পারেন না মাতোলিয়াস। চলে যান বন্ধুর বাসায়।

ব্রাজিলের দক্ষিণ থেকে ভাগ্য অনুসন্ধানে রিওতে এসেছিলেন মাতোলিয়াস। কিন্তু শুরুতে কষ্ট ছিল। রাস্তায়ই ঘুমাতে হতো তাঁকে। এভাবেই কষ্টে কষ্টে জীবন কাটছিল। এক বন্ধু মাতোলিয়াসকে বালির প্রাসাদ বানানো শেখান। এরপরই পরিস্থিতি বদলে গেল।

বালির প্রাসাদ গড়ার কৌশল নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেন মাতোলিয়াস। ব্রাজিলের স্বনামধন্য স্থপতি নিমায়া আর গোদি তাঁর হিরো। তাঁদের নকশার আদলেই বানালেন প্রাসাদ। রিও ডি জেনিরোর মেয়র এ নিয়ে কোনো সমস্যা করেননি বলে জানালেন।

একাকী জীবন ধারণের জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই। পর্যটকেরা তাঁকে দেখে মজা পান। ছবি তোলেন। তাঁরা খুশিমনে যা দেন, তা-ই দিয়ে বেশ চলে যায়। প্রাসাদের প্রবেশপথে একটি অনুদান বাক্সও রেখেছেন। সেখানেও জমা পড়ে অর্থ। তবে মাঝে মাঝে সেটি চুরি হয়ে যায়। তখন ভারি মন খারাপ হয় মাতোলিয়াসের। 
মাঝেমধ্যে একটি বিপণনকেন্দ্র থেকে মাতোলিয়াসের কাছে অর্থ আসে। বিশেষ কোনো ঘটনা বা অনুষ্ঠানের জন্য চমৎকার বালির ভাস্কর্য গড়ে দেওয়ার অনুরোধ আসে। কিন্তু মাতোলিয়াস চান না তাঁর এত কষ্টের কাজগুলো ক্ষণস্থায়ী হোক। রূপকথার মতো এমন এক বালির প্রাসাদ গড়তে যেখানে ১০ থেকে ২০ ঘণ্টা লাগে, সেখানে মাত্র কয়েক মিনিটের বৃষ্টি এই প্রাসাদকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আশাবাদী মাতোলিয়াস বালির সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে একটি প্রাসাদ বানাতে চান, যেটা ভঙ্গুর হবে না। ছুরি ও কোদাল দিয়ে ক্রমাগত মেরামত করে ভঙ্গুর বালির প্রাসাদ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যান মাতোলিয়াস। রূপকথার রাজপ্রাসাদকে টিকিয়ে রাখার এই কাজে কোনো ক্লান্তি নেই তাঁর। সূত্র: এএফপি