অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নিয়ে দুই পক্ষ দুই মেরুতে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর করার প্রাথমিক বিষয়গুলোতে সুরাহা হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এবার ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের পালা। তার আগে অন্তর্বর্তী সময়ে উভয় পক্ষের সম্পর্ক কেমন থাকবে, তা নিয়ে লেগে গেছে বিবাদ।

বিষয়টিতে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে প্রধান সমঝোতাকারী মিশেল বার্নিয়ে সম্প্রতি এক ভাষণে ইইউর দাবি তুলে ধরে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সময়ে অভিবাসীদের মুক্ত চলাচল এবং ইউরোপিয়ান আদালতের নির্দেশনা মানাসহ ইইউর সব নিয়ম মেনে চলতে হবে যুক্তরাজ্যকে। কিন্তু এ সময়ে যুক্তরাজ্য ইইউর সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না। অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের বেশি হওয়া চলবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস বলেন, অন্তর্বর্তী সময়ে প্রণীত আইন মানতে রাজি নন তাঁরা। মুক্ত অভিবাসন নীতি মানার বিষয়েও তিনি আপত্তি তোলেন।

২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে বলে দিনক্ষণ ঠিক করেছে যুক্তরাজ্য। বিচ্ছেদের পর হুট করেই যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনজীবনে এর প্রভাব না পড়ে, সে জন্য দুই বছর পর্যন্ত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা চালু রাখতে চায় তারা।

এদিকে ব্রেক্সিট কার্যকরের পর ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে থেরেসা মের মন্ত্রিসভায়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো অবস্থান ঠিক করেনি থেরেসা মে সরকার। যে কারণে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী এবং ব্রেক্সিটের বিরোধী উভয় শিবির থেকে তুমুল সমালোচনার শিকার হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।

গত সোমবার ইইউর পক্ষে প্রধান সমঝোতাকারী মিশেল বার্নিয়ে যুক্তরাজ্য সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিসের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। বৈঠক পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় ডেভিড ডেভিস বলেন, যুক্তরাজ্য ইইউর কাস্টমস ইউনিয়ন (এর মাধ্যমে সমান শুল্ক হারে বাণিজ্য করে সদস্যভুক্ত দেশগুলো) এবং সিঙ্গেল মার্কেট (একক বাজার) ত্যাগ করবে। তাঁরা চান একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করে নতুন সম্পর্ক গড়তে।

মিশেল বার্নিয়ে বলেন, কাস্টমস ইউনিয়ন ত্যাগ করলে তা পণ্যের মুক্ত চলাচলে বাধা তৈরি করবে। যুক্তরাজ্যকে ভেবেচিনতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন যে সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে, যুক্তরাজ্যকে দ্রুত তাদের উদ্দেশ্যগুলো পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় নির্ধারিত সময়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে চুক্তি সম্পাদন না–ও হতে পারে।

আগামীকাল বুধবার এবং বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার ব্রেক্সিট বিষয়ক ১১টি উপকমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এসব বৈঠকে যুক্তরাজ্য নিজেদের চাওয়াগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর শুক্রবার ইইউর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর কথা রয়েছে।

এ পর্বে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নিয়ে সমঝোতার পাশাপাশি প্রাথমিক পর্বে সম্মত হওয়া বিষয়গুলোকে আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে। আর অক্টোবরের মধ্যেই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা চায় ইইউ। কেননা ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের আগেই চূড়ান্ত চুক্তি ইইউর ২৭টি দেশের পার্লামেন্টে পাস হতে হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টেও তা পাস হতে হবে। তবেই সেই চুক্তি কার্যকর হবে। অন্যথায় সমঝোতা ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।