যুক্তরাজ্যে নারী ভোটাধিকারের শতবর্ষ

গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাজ্যের নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছিলেন ১৯১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। ইতিহাসের বিরল সেই দিনটির শতবর্ষ পার করছে দেশটি। ছবি: বিবিসি
গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাজ্যের নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছিলেন ১৯১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। ইতিহাসের বিরল সেই দিনটির শতবর্ষ পার করছে দেশটি। ছবি: বিবিসি

গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাজ্যের নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছিলেন ১৯১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। ইতিহাসের বিরল সেই দিনটির শতবর্ষ পার করছে দেশটি।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বর্তমানে দুই শতাধিক নারী এমপি রয়েছেন। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী। কিন্তু আজও নারীর প্রতি বৈষম্য, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং নারীকে খাটো করে দেখার মানসিকতা বিদ্যমান। যে কারণে ভোটাধিকার পাওয়ার শতবর্ষ পূর্তি উদ্‌যাপনের এই ক্ষণে এসেও যুক্তরাজ্যের নারীরা নিজেদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি তুলছেন। তাঁরা সারা বিশ্বের নারীদের অধিকারের কথা বলছেন।

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, অনলাইনে নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো এবং ভয় দেখানোর বিষয়টি এখন মহামারি হয়ে দেখা দিয়েছে। গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেন, ১০০ বছর পরও সমান অধিকারের জন্য নারীদের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।

অভিনেত্রীদের সঙ্গে হলিউডের খ্যাতনামা প্রযোজক হার্ভি উইনস্টেইনের যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার রেশ এখনো কাটেনি। বিবিসির মতো খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যমে নারী সাংবাদিকদের পুরুষদের তুলনায় বেতন কম দেওয়া নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। এসবের মধ্যেই পালিত হচ্ছে নারী ভোটাধিকারের শতবর্ষ।

যুক্তরাজ্যে নারীদের ভোটাধিকার আদায়ে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছিল। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯০৬ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ভোটাধিকার আন্দোলনে যুক্ত ১৩ শতাধিক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অনেককেই দেওয়া হয়েছিল জেলদণ্ড।

শতবর্ষ পূর্তির এই ক্ষণে এসে তাই দাবি উঠেছে, দণ্ডিত সেই নারীদের যাতে নির্দোষ ছিল বলে ঘোষণা করা হয়। তবে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আইনিভাবে কাজটি কঠিন। কারণ, সে সময় অনেকেই জ্বালাও-পোড়াও বা ভাঙচুরে লিপ্ত ছিলেন।

১৯১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ‘দ্য রিপ্রেজেনটেশন অব পিপলস অ্যাক্ট’ পাসের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়। তবে ওই আইন অনুযায়ী কেবল ৩০ বছরের বেশি বয়সী এবং যাঁরা সম্পত্তির মালিক, তাঁরা ভোট দিতে পারতেন। ওই বছরের ২১ নভেম্বর নারীদের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অনুমোদন দিয়ে আইন পাস করা হয়। একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের নারীরা প্রথমবারের ভোট দেন।

১৯২৮ সালে প্রণীত ‘দ্য ইকুয়াল ফ্র্যাঞ্চাইজ অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে ২১ বছরের বেশি বয়সী দেশের সব নারীকে ভোটের অধিকার দেওয়া হয়। ১৯২৯ সালের ৩০ মে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে দেশটির ২১ বছরের সব নারী প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ১৮ বছর বয়সী নারী-পুরুষ সবাই ভোটার হওয়ার যোগ্য।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে। বছরব্যাপী এটি উদ্‌যাপনে সরকার ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছে।

নানা আয়োজনের মধ্যে, নারীদের ভোটাধিকার আদায় আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে। ১৯৮১ সালে প্রণীত আইনটিও প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হবে। সংসদের সব সাবেক ও বর্তমান নারী এমপিদের সম্মানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী। বিবিসি রেডিও ফোর দিবসটিতে কেবল নারী উপস্থাপক দিয়েই অনুষ্ঠান চালাচ্ছে। স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টারজিওন রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে পাঁচ লাখ পাউন্ডের বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন।