রোহিঙ্গাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য মুছে ফেলার অভিযোগ

জ্বলছে রাখাইন গ্রাম। ফাইল ছবি: এএফপি
জ্বলছে রাখাইন গ্রাম। ফাইল ছবি: এএফপি
  • মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ।
  • প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে লাখো রোহিঙ্গা।
  • রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানকে জাতিগত নির্মূল বলছে জাতিসংঘ।

মিয়ানমারে আকাশ থেকে তোলা ছবিতে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বেশ কিছু স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। এতে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ও মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য মুছে ফেলার অভিযোগ নতুন করে উঠে এসেছে। 
গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইন বৌদ্ধদের হামলা ও জ্বালাও-পোড়াও শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা।
জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এ অভিযানকে জাতিগত নির্মূল বলে আখ্যায়িত করেছে। মানবাধিকারকর্মীরাও বলেছেন, পদ্ধতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম, মসজিদ ও সম্পত্তি ধ্বংস করার ঘটনা কার্যকর অর্থেই তাঁদের পূর্বপুরুষদের ভিটামাটি থেকে উৎখাত করার পদক্ষেপ। মিয়ানমারের সরকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের কোনো জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। দশকের পর দশক তারা নানা বঞ্চনা-নিপীড়নের শিকার।
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে গত সপ্তাহে এক সফরে যান কূটনীতিকেরা। এরপর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেখানকার কিছু ছবি ছাড়া হয়েছে। এসব ছবিতে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে নৃশংসতা চালানোর যে দৃশ্য ফুটে উঠেছে, তাতে রাজ্যটি থেকে মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য মুছে ফেলার অভিযোগ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
মিয়ানমারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান স্মিটের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ওই সব ছবিতে বিস্তৃত এলাকা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার দৃশ্যে রাখাইনের আতঙ্কজনক পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে। সেনা অভিযান শুরুর পর জ্বালিয়ে দেওয়া বিভিন্ন গ্রামে এখন শুধুই ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। তাতে গুঁড়িয়ে যাওয়া থেকে শুধু বাড়িঘর-স্থাপনাই নয়, রক্ষা পায়নি গাছগাছালি, ফল-ফসলাদির খেতও।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক বছর ধরে কাজ করছেন বেসরকারি সংগঠন আরাকান প্রজেক্টের প্রধান ক্রিস লিউয়া। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘর-গ্রাম জ্বলতে দেখে মর্মাহত। তাদের আশঙ্কা, আসছে বর্ষা মৌসুমে রাখাইনে নিজেদের অতীত বসবাসের চিহ্নটুকুও ধুয়েমুছে যাবে।
ক্রিস লিউয়া আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের মনে এ ধারণা জন্মেছে, সেনাবাহিনী ওই অঞ্চলে তাদের বসবাসের শেষ চিহ্নও মুছে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য মুছে ফেলার পদ্ধতিগত চেষ্টার অভিযোগ নতুন নয়। গত বছর জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা থেকেও এ অভিযোগ করা হয়েছিল।

মিয়ানমার সরকারের ভাষ্য
মিয়ানমারের সমাজকল্যাণবিষয়ক মন্ত্রী উইন মায়াট আয় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার প্রধান। তিনি দাবি করেছেন, স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ ওই গ্রামগুলো আগের চেয়ে ভালো মানে উন্নীত করার পরিকল্পনার অংশ।