রামাফোসার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ

সিরিল রামাফোসা।  ছবি: রয়টার্স
সিরিল রামাফোসা। ছবি: রয়টার্স

দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নানামুখী চাপে গত বুধবার পদত্যাগ করেছেন প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। এক দিন পার না হতেই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর ডেপুটি সিরিল রামাফোসা। এর আগে গত ডিসেম্বরেই ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) প্রধানের পদে জুমার জায়গায় নির্বাচিত হন তিনি।

খনিশ্রমিকদের নেতা থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া ৬৫ বছর বয়সী রামাফোসার মধ্যে বহু আগেই সম্ভাবনা দেখেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী কিংবদন্তির নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। তাঁর মতে, রামাফোসা নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে প্রতিভাবান নেতাদের একজন। এএনসিতে ম্যান্ডেলা-পরবর্তী নেতা হিসেবে ১৯৯৯ সালে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন রামাফোসা। কিন্তু ওই দফায় ব্যর্থতার মুখ দেখেন। সে ব্যর্থতার ওপরে দাঁড়িয়েই এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া তাঁর। বিপুল সম্ভাবনাময় হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার এই কান্ডারির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ শাসন, নিপীড়নমূলক সরকারের কালো অধ্যায়ের অবসান ২৩ বছর আগে হলেও এখনো বিপুল খনিজ ও নানা সম্পদে ভরপুর দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে দেশটিতে সমভাবে রয়ে গেছে বৈষম্য ও দারিদ্র্য। বর্ণবাদী শাসন থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই বৈষম্য ও দারিদ্র্য কাটিয়ে দেশটিকে পুনর্গঠন এবং কোটি কোটি মানুষের মৌলিক সেবা সরবরাহে এএনসি সরকার ব্যাপক প্রচেষ্টাও চালিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক মানুষ এখনো বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। লেখাপড়া ও স্বাস্থ্যসেবা-সুবিধাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রান্তিক পর্যায়ের। এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটির ৯ বছর বয়সী শিশুদের প্রতি ১০ জনের ৮ জন কার্যকর অর্থেই নিরক্ষর। দেশে সহিংস অপরাধের মাত্রা বিশ্বে সর্বোচ্চ। দরিদ্র মানুষের দুর্দশাও চরম।

বেকারত্বের হার এ মুহূর্তে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটি ৬৮ শতাংশ। অনুমান অনুযায়ী এ বছর অর্থনীতিতে এই সামান্য গতিশীলতা যদিওবা আসে, তাতে কোটি কোটি মানুষের বেকারত্ব যে রাতারাতি ঘুচবে সে আশা একেবারেই নেই। দেশে বড় ধরনের অবকাঠামোগত সমস্যাও বিদ্যমান। যেমন দক্ষ শ্রমিকের দীর্ঘদিনের অভাব যথারীতি এখনো রয়ে গেছে।

মূলত যে কেলেঙ্কারির ঘুরপাকে পড়ে দীর্ঘ ৯ বছর পর ক্ষমতা থেকে জুমাকে সরে যেতে হয়েছে, সেই দুর্নীতির সর্বগ্রাসী রূপ কাটেনি। গাড়ি চালানো নিয়ে ছোটখাটো অপরাধের জন্য পুলিশের অর্থ দাবি করা থেকে শুরু করে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিপুল অঙ্কের ঘুষ আদায়ের মতো সব ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়েই রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতি সরকারি আর্থিক খাতকেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত করেনি; জনগণের আস্থায়ও ধস নামিয়েছে। এর মধ্যেও দেশটিতে রয়েছে অনেক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, বিশেষত বিচার বিভাগ। অবশ্য পুলিশ ও সরকারি কৌঁসুলিদের ওপর জনগণের আস্থা সীমিত।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় আগামী বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রচারণা মাঠে গড়ানোর আগে রামাফোসার প্রথম কাজ হবে এএনসিতে ঐক্য ফিরিয়ে আনা।