বিদেশিদের ব্যবসার অবারিত সুযোগ

কাতারে ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আগের চেয়ে সহজ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একটি খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছে। এটি আইনে পরিণত হলে কাতারে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন বাড়বে তেমনি স্থানীয় শিল্প ও উৎপাদন আরও গতিশীল হবে বলে আশা করছেন কাতারের অর্থনীতিবিদেরা। পাশাপাশি কাতারের অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

কাতারে বিনিয়োগ সম্পর্কিত একটি আইনের খসড়া নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আইনটি সম্পর্কে কিছু মতামত দিলে তা পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থ ও অর্থনীতি সম্পর্কিত কমিটির কাছে পাঠানো হয়। এই কমিটি আইনের ধারাগুলো যাচাই-বাছাই করে সুপারিশমালাসহ মন্ত্রিপরিষদের কাছে উপস্থাপন করবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান আহমদ বিন আবদুল্লাহ আলমাহমুদ।
সভায় উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান বলেন, নতুন আইনটি অনুমোদিত হওয়ার পর বিদ্যমান ২০০২ সালের ১৩ নম্বর আইন বাতিল বলে গণ্য হবে। গত কয়েক বছরে বিদেশিদের বিনিয়োগ সম্পর্কিত এই আইনে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়।
উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান বলেন, আলোচিত নতুন আইনের খসড়ায় কাতারে বিদেশিদের জন্য যেকোনো খাতে শতভাগ পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে ওই বিদেশির জন্য একজন কাতারি বাণিজ্যিক প্রতিনিধি থাকতে হবে। আর যদি কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কাতারি বিনিয়োগকারী অংশীদার হোন, তবে তিনি বাণিজ্যিক প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হবেন না।
তবে নতুন আইনে কিছু নির্দিষ্ট খাতে বিদেশিদের শতভাগ বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। যেমন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স খাতে কোনো বিদেশি শতভাগ বিনিয়োগ করতে পারবে না। তবে মন্ত্রিপরিষদ এই আইন থেকে কাউকে আলাদা করে সুযোগ দিতে পারেন।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এজেন্সি ও রিয়েল এস্টেট কেনায় বিদেশিরা শতভাগ

বিনিয়োগ করতে পারবে না। এ ছাড়া স্টক মার্কেটে বিদেশিরা সর্বোচ্চ ৪৯ ভাগ শেয়ার বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন। তবে মন্ত্রিপরিষদ অর্থনীতি ও শেয়ার বাজারের প্রয়োজনে এই হার বাড়াতে পারেন। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ যদি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কোনো খাত নির্দিষ্ট করে দেয়, সেটিও এই নিষেধের আওতায় পড়বে।

নতুন এই আইনের খসড়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভাড়া বা অন্য কোনো উপায়ে প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ, প্রতিষ্ঠান স্থাপনে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি এবং এসবে শুল্ক ও আয়কর প্রত্যাহারসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নাছের আলহোমায়দি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার এই আইন বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা অর্জনে সহায়ক হবে। পাশাপাশি এর ফলে রাষ্ট্র ও নাগরিকেরা উপকৃত হবেন। অন্য কয়েকজন উপদেষ্টা আইনটি বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রাষ্ট্রের মুনাফা ও লাভবান হওয়ার বিষয়টি যেন অগ্রাধিকার পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার পক্ষে মতামত দেন।
আরেক উপদেষ্টা নাছের সুলায়মান আলহায়দার বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এখন বিদেশি পুঁজি ও বিনিয়োগকে নানাভাবে সুযোগ দেওয়া দিচ্ছে। কাতারের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এমন উপযুক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যেকোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা প্রতিযোগী হতে পারে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ থাকা উচিত নয়।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর গত বছরের জুনে কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের ঘোষণা দেয়। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় আড়াই শ দিন। এর মধ্যেও কাতারের অর্থনীতি ও বাণিজ্য খাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, সব কিছুই চলছে স্বাভাবিক গতিতে। তবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলে নতুন এই আইন অপার এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।