লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও পাঞ্জাব ব্যাংকের ঋণ

লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কেনা সেই গাড়ি। এটি এখন দিল্লির মতিলাল নেহরু মার্গের লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর স্মৃতি ভবনে। ছবি: শশী থারুর টুইটার থেকে নেওয়া
লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কেনা সেই গাড়ি। এটি এখন দিল্লির মতিলাল নেহরু মার্গের লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর স্মৃতি ভবনে। ছবি: শশী থারুর টুইটার থেকে নেওয়া

ভারতের ডায়মন্ড ব্যবসায়ী নীরব মোদির প্রতারণার অভিযোগে দেশজুড়ে যখন তোলপাড়, তখন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর তুলে এনেছেন পাঞ্জাব ব্যাংক থেকে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর পাঁচ হাজার রুপি ঋণ নেওয়া এবং তা পরিশোধের এক কাহিনি। শশী থারুর একটি টুইট বার্তায় গত মঙ্গলবার তুলে ধরেছেন সেই কাহিনি।

ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেসের সেদিনকার শীর্ষ নেতা লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন। ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৬৪-৬৬ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী সেদিন অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দে গিয়েছিলেন ভারত-পাকিস্তান শান্তিচুক্তি সম্পাদনের জন্য। দুর্ভাগ্যবশত সেখানেই তিনি হঠাৎ প্রয়াত হন।

লাল বাহাদুর শাস্ত্রী অতি সাধারণভাবে জীবন যাপন করতেন। শাস্ত্রীর ছেলে অনিল শাস্ত্রী তাঁর বাবার পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার রুপি ঋণ নেওয়ার প্রসঙ্গে বলেছেন, তখন তিনি দিল্লির সেন্ট কলম্বাস স্কুলে পড়াশোনা করতেন। টাঙায় চড়ে তাঁকে আসতে হতো স্কুলে। মাঝেমধ্যে অবশ্য বাবার সরকারি গাড়িতেও এসেছেন। কিন্তু বাবা তা আদৌ পছন্দ করতেন না। এরপরেই তাঁদের পরিবার একটি গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন ১৯৬৫ সাল। প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রীর পরিবার পছন্দ করে ফিয়াটের একটি গাড়ি। দাম ছিল ১২ হাজার রুপি। কিন্তু শাস্ত্রীর পরিবারের তখন ব্যাংক হিসাবে ছিল মাত্র সাত হাজার রুপি। অগত্যা তাদের ঋণ নিতে হয় পাঁচ হাজার রুপি। নেওয়া হয় পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে। এক দিনেই পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণের আবেদন মঞ্জুর করেছিল। সেই ঋণ পরিশোধের আগেই হঠাৎ তাসখন্দে প্রয়াত হন শাস্ত্রী।

মৃত্যুর পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ পরিশোধের জন্য নোটিশ পাঠান শাস্ত্রীর স্ত্রী ললিতা শাস্ত্রীর কাছে। ললিতা শাস্ত্রী তাঁর পরিবারের পেনশন থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কিস্তিতে শোধ করেন সেই ঋণ। এখন সেই গাড়ি রয়েছে দিল্লির মতিলাল নেহরু মার্গের লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর স্মৃতি ভবনে।

ডায়মন্ড ব্যবসায়ী নীরব মোদির মুম্বাইয়ের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ১১ হাজার ৪০০ কোটি রুপি প্রতারণার অভিযোগে গোটা ভারত তোলপাড়। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন ব্যাংকের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা। কিন্তু এখনো নাগাল মেলেনি নীরব মোদির।