ভিডিও কলেই বাঁচল নারীর জীবন

অপোকুয়া কোয়াপং
অপোকুয়া কোয়াপং

বড় বোন থাকেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে। ছোট বোন থেরেসা মের। দুই বোন প্রায়ই কথা বলেন প্রযুক্তির কল্যাণে; ফোনে ও ভিডিও কলে। একদিন কথার মাঝে এক বোন দেখতে পান, ফোনের অপর পাশে তার বোনের চেহারা অস্বাভাবিক। কিন্তু বোনকে বোঝাতে পারছিলেন না ব্যাপারটি। অগত্যা হেল্প লাইনে ফোন করে চিকিৎসকের পরামর্শে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়ায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া সেই বোন বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান।

বিবিসির খবরে বলা হয়, অপোকুয়া কোয়াপং নামের ৫৮ বছরের এক নারী যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একাই থাকেন। ছোট বোন অ্যাদুমিয়া সাপং যুক্তরাজ্যর ম্যানচেস্টারে। সম্প্রতি অ্যাদুমিয়া অপোকুয়াকে আইফোনে ভিডিও কল দিয়ে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ের বোনকে দেখে বিস্মিত হয়ে যান। দেখেন, তাঁর বোনের মুখের অবস্থা কিছুটা অস্বাভাবিক। ব্যাপারটি বোন কোয়াপংয়ের নজরে আনার চেষ্টা করতে থাকেন অ্যাদুমিয়া। ব্যাপারটি বুঝতে পারছিলেন না কোয়াপং। বোনকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু কোয়াপংয়ের অবস্থা এতই খারাব ছিল যে পানির গ্লাস হাতে নিতে পারছিলেন না। পরে সেই অবস্থায় ভিডিও কনফারেন্সে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন অ্যাদুমিয়া, বিপদের হাত থেকে বাঁচান বড় বোন অপোকুয়াকে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন বাঁচান বোনের। প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নানান নেতিবাচক খবরের মধ্যে এ খবরটি অবশ্যই আশার।

কোয়াপাং বলেন, ‘আমার ছোট বোন আমাকে দেখে বলে, আমার মুখমণ্ডল ঠিক নেই। তার কথায় আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি ঠিকই, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।’

সাপং বলেন, ‘আমি দেখলাম কোয়াপং ভালো অনুভব করছিল না। তাঁকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। এ জন্য এসপিরিন খাওয়ার পরামর্শ দিলাম। কিন্তু কোয়াপং এতই ক্লান্ত ছিলেন যে পানির গ্লাসটিও হাতে নিতে পারছিলেন না।’

অ্যাদুমিয়া সাপং ভিডিও কলে কথা বলার সময় বোনের মুখ বেঁকে যেতে দেখছিলেন। তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে অপোকুয়াকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বলেন। এমন পরিস্থিতে কোয়াপং ভেবেছিলেন তাকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তাই ঘটনার সত্যতার জন্য তাঁদের এক চিকিৎসকের সঙ্গে কনফারেন্সে কথা হয়। চিকিৎসকও কোয়াপংয়ে কথাবার্তায় অসংলগ্নতা লক্ষ করেন। তখন অ্যাদুমিয়া সাপোং এবং চিকিৎসক মিলে কোয়াপংকে দ্রুত জরুরি সেবায় কল দিতে তাগিদ দেন। কোয়াপং জরুরি সেবায় ফোন দিয়ে সাহায্য চান। পরে হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এর ফলে শরীরের বাঁয়ের অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছে। তবে সময়মতো হাসপাতালে আসায় কেটে যায় তাঁর বিপদ।

খাদ্যবিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন অপোকুয়া কোয়াপং। তিনি বলেন, ‘ওই ভিডিও কলই তাঁর জীবন রক্ষা করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রযুক্তি কেবল আমার জীবনকে রক্ষা করেনি, বরং এটি এখন আমার জীবন চলাতে সাহায্য করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের প্রিভেনশন এবং ক্যাম্পেইনের প্রধান এসেমি রাসেল বলেন, যেকোনো বয়সে, যেকোনো সময়ে, যে কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হতেই পারেন। ফলে জনগণের এ বিষয়ে জানা জরুরি। এতে মানুষের জীবন রক্ষা পায়।