পাত্তা পাচ্ছেন না তাপস পাল?

তাপস পাল
তাপস পাল

রোজভ্যালি দুর্নীতি কাণ্ডে জড়িয়ে ১৩ মাস কারাবন্দী ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। সম্প্রতি মুক্তি পেলেও দলের কাছে পাত্তা পাচ্ছেন না এই সাংসদ। চিটফান্ড সংস্থা রোজভ্যালির অর্থ আত্মসাৎ এবং নারীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যের কারণে দলের করুণা লাভ করতে পারেননি তিনি। অথচ এই কাণ্ডে জড়িয়ে আরেক সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জামিনে মুক্তি পেয়ে তৃণমূলের আশীর্বাদ নিয়ে দলের কাজে ব্রতী হয়েছেন।

গত মাসে ওডিশা হাইকোর্ট তাপস পালকে জামিনে মুক্তি দেন। পশ্চিমবঙ্গের বেআইনি অর্থলগ্নিকারী সংস্থা রোজভ্যালি থেকে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা গ্রহণ এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর কলকাতায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপরই তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওডিশার রাজধানী ভুবনেশ্বরের কারাগারে। সেখানেই ছিলেন এত দিন। সম্প্রতি তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ওডিশার হাইকোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। তাও এক কোটি রুপি নগদ অর্থের বেল বন্ডে। পাশাপাশি আদালতে তাঁর পাসপোর্ট জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

৪ ফেব্রুয়ারি তিনি আইনি কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর মুক্তি পান ভুবনেশ্বরের কারাগার থেকে। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে ২০১৪ সালের একটি মন্তব্যের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বলেন, ‘আমি ওই ভুল মন্তব্যের জন্য দুঃখিত। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’

২০১৪ সালের জুন মাসে নদীয়ার চৌমাহা গ্রামে এক দলীয় সমাবেশে দাঁড়িয়ে এই তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল বলেছিলেন, ‘আমি চন্দননগরের ছেলে। অনেক রংবাজি করেছি। আমি প্রচুর মাস্তানি করেছি। আমি পকেটে মাল নিয়ে ঘুরি। আমি নিজে রিভলবার দিয়ে গুলি করে চলে যাব। সিপিএমকে গুলি করে মারব। আমার মা, বোন, বাবা, বাচ্চা কারোর গায়ে যদি হাত পড়ে, আমি ছেড়ে কথা বলব না। বাড়ি বাড়ি ঢুকে ছেলে পাঠিয়ে রেপ করে দেব। তৃণমূলের কারোর গায়ে যদি কোনো সিপিএম হাত দেয়, তবে তাদের গোষ্ঠী শেষ করে দেব। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেব।’ সেই মন্তব্য যে ভুল ছিল, তা এত দিন পর স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তাপস পাল সেদিন। বলেছিলেন, ‘সুস্থ হওয়ার জন্য কলকাতার বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নেব। তারপর অভিনয়ের কথা ভাবব ।’

এখন দলের সান্নিধ্য লাভের জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি তাপস পাল সস্ত্রীক দেখা করতে যান দলের মহাসচিব ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে। কিন্তু সেখানে দেখা পাননি মহাসচিবের। এরপরে তাপস পালের স্ত্রী নন্দিনী পাল টেলিফোনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালান। কিন্তু উত্তর মেলেনি। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দলের নেতারাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না।

এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তবে কি তাপস পাল ব্রাত্য হয়ে যাচ্ছেন নিজের দলে? আগামী বছরই ভারতের লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে তাপস পাল ফের মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, তাপস পালের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং বিরোধী দল সম্পর্কে তাঁর বেফাঁস মন্তব্যকে ভালো চোখে নেয়নি দল। যার ফলে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিনের জন্য যেভাবে মাঠে নেমেছিল, তাপস পালের ক্ষেত্রে তা ছিল অনুপস্থিত। এসব ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলের খবর, তাপস পালের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ দল এবার অনেকটাই তাঁকে দূরত্বে রেখেছে। ফলে ভবিষ্যতে তিনি লোকসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে।