অ্যাসিডদগ্ধ নয়, শিল্পীর পরিচয় চান মাসুমেহ

নিজের শিল্পকর্মের সামনে মোহসেন মোর্তাজাভি। ২৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: এএফপি
নিজের শিল্পকর্মের সামনে মোহসেন মোর্তাজাভি। ২৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: এএফপি

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন মাসুমেহ আতিইয়ে। এর জবাবে শ্বশুর তাঁর ওপর অ্যাসিড ছোড়েন। এতে চিরদিনের জন্য চোখ হারান মাসুমেহ। এরপর আট বছর কেটে গেছে। বিচার চাওয়ার সাহস পাননি। কারণ, বিচার চাইতে গেলে ছেলেকেও একই শাস্তি দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিল শ্বশুরবাড়ির পরিবার।

ইরানে ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী দুই চোখের বিনিময়ে অপরাধীর এক চোখ উৎপাটনের বিধান রয়েছে। কিন্তু অসহায় এই মা হুমকির মুখে বিচার না চেয়ে নিজের ছেলেকেই বেছে নেন।

৩৫ বছর বয়সী মাসুমেহ এখন অনেক শক্ত। চোখ হারালেও মনের জোর হারাননি। ইস্পাহান শহর ছেড়ে তেহরানে ১২ বছরের ছেলেকে নিয়ে নতুন সংসার শুরু করেছেন। তিনি বলেন, তিনি নিজে শুধু অ্যাসিড হামলার শিকার বলে পরিচিত হতে চান না; একজন শিল্পী হিসেবে দেখতে চান।

চলতি সপ্তাহে তেহরানের আশিয়ানেহ গ্যালারিতে অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তিদের শিল্পকর্ম নিয়ে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে মোহসেনের তৈরি এক শিল্পকর্মও স্থান পায়। অ্যাসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি ও অ্যাসিড হামলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহের জন্য এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

ডান থেকে দ্বিতীয় ছবিটি মাসুমেহ আতিইয়ের তৈরি। ২৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: এএফপি
ডান থেকে দ্বিতীয় ছবিটি মাসুমেহ আতিইয়ের তৈরি। ২৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: এএফপি

মাসুমেহ মাটির পাত্র, নকশা করা বাটি ও মূর্তি তৈরি করেন। অন্য অন্ধ ব্যক্তিদের শিল্পকর্ম তৈরি শেখান। তিনি বলেন, ‘আমি এখন পুরোপুরি স্বাধীন।’

এই প্রদর্শনী সম্পর্কে মোহসেন বলেন, ‘আমি মনে করি, এই প্রদর্শনী আমাদের মতো যারা ভুক্তভোগী, তাদের সাহস জোগাবে। তারা ঘরে লুকিয়ে না থেকে সমাজে ফিরে আসবে।’

ইরানে বছরের পর বছর একের পর এক অ্যাসিড হামলা ঘটনা ঘটে আসছে।

তবে সব সময় যে নারীরাই এ হামলার শিকার হন, তেমনটা নয়। পুরুষেরাও হন। তেমনই একজন মোহসেন মোর্তাজাভি। এক সহকর্মী ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে অ্যাসিড ছোড়ে। তাঁর শিল্পকর্ম খুবই জটিল। মোহসেন কাঠের পাত দিয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করেন, স্থানীয়ভাবে যা মোয়ারাঘ নামে পরিচিত।

এই প্রদর্শনীতে মোহসেনের শিল্পকর্মটি তাঁর নিজের মুখের ছবি। সেখানে অর্ধেক ছবি একসময় তিনি যেমন দেখতে ছিলেন তা, আর বাকি অর্ধেক হলো তাঁর চোখ গাঢ় কালিতে ঢাকা। তিনি বলেন, ‘আমি সেই মুহূর্তটিকে তুলে ধরতে চেয়েছি।’