এক মাস ধরে বিমানবন্দরে আটকে তিনি!

কাজের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব-আমিরাত থেকে চলে আসতে হয়েছিল সিরিয়ার নাগরিক হাসান আল-কোনতারকে। এখন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক মাসেরও বেশি সময় আটকে আছেন তিনি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কাজের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব-আমিরাত থেকে চলে আসতে হয়েছিল সিরিয়ার নাগরিক হাসান আল-কোনতারকে। এখন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক মাসেরও বেশি সময় আটকে আছেন তিনি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বের করে দেওয়ায় মালয়েশিয়ায় ঢুকতে চেয়েছিলেন হাসান আল-কোনতার। কিন্তু নানা ঝামেলায় থাকা হয়নি। এর পর আরও দুটি দেশে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। অগত্যা এক মাসেরও বেশি সময় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরেই আটকে রয়েছেন হাসান।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কাজের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে সংযুক্ত আরব-আমিরাত থেকে চলে আসতে হয়েছিল সিরিয়ার নাগরিক হাসান আল-কোনতারকে। তখন সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। তাই মালয়েশিয়ায় থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা ভেস্তে যাওয়ায় কম্বোডিয়া ও ইকুয়েডরে যাওয়ার চেষ্টা করেন হাসান। তাও ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগও কোনো মন্তব্য করতে চায়নি।

সম্প্রতি নিজের অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন হাসান। কুয়ালালামপুরের ২ নম্বর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই ভিডিওটি পোস্ট করেন তিনি। তাতেই হাসানের দুর্দশার বিষয়টি সামনে আসে। বিবিসি থেকে যোগাযোগের পর উদ্বিগ্ন কণ্ঠে হাসান বলেন, বিমানবন্দরে অনেক দিন ধরে থাকতে থাকতে দিন গোনাই ভুলে গেছেন তিনি!

হাসান আল-কোনতার বলেন, ‘আমি সাহায্য পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছি। আমি আর বিমানবন্দরে থাকতে পারছি না, অনিশ্চয়তা আমাকে পাগল করে তুলেছে। মনে হচ্ছে, আমার জীবন অতলে হারিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, বিমানবন্দরে থাকায় ঠিকমতো গোসল ও দাড়ি-গোঁফ কামানোর সুযোগও পাচ্ছেন না।

সিরিয়ায় সংঘাতের কারণে আরব আমিরাতে চাকরি করতে গিয়েছিলেন জানিয়ে হাসান বলেন, ‘আমি সেখানে আমার চাকরি ও কাজের অনুমতি-দুটোই হারিয়েছি। সেই থেকে দৌড়াচ্ছি আমি।’ তিনি জানান, বিশ্বের কয়েকটি দেশের বিমানবন্দরে সিরীয়দের ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা দেওয়া হয়। মালয়েশিয়া তেমনই একটি দেশ। তাই প্রথমেই এখানে এসেছিলেন তিনি।

মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ হাসানকে তিন মাসের পর্যটক ভিসা দিয়েছিল। কিন্তু আরও ভালো সুযোগের আশায় ইকুয়েডর যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। হাসান বলেন, টার্কিশ এয়ারওয়েজের টিকিট কেনার পরও তাঁকে উড়োজাহাজে উঠতে দেয়নি মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ। তখন তাঁর স্থান হয় বিমানবন্দরের ট্রানজিট সেকশনে।

বিবিসির খবরে আরও বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় হাসানকে ‘কালোতালিকাভুক্ত’ করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত সময় বিমানবন্দরে থাকার কারণে জরিমানাও পরিশোধ করতে হয়েছে।

হাসান বলেন, এর পর কম্বোডিয়া যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু কম্বোডিয়া তাঁকে দেশে ঢুকতে না দিয়ে উল্টো কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ফেরত পাঠায়। এটি গত ৭ মার্চের ঘটনা। এর পর থেকেই কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে আটকে আছেন তিনি।

এদিকে কম্বোডিয়ার অভিবাসন মন্ত্রণালয় বিবিসিকে জানিয়েছে, সরকারি শর্ত পূরণ না হওয়ায় হাসানকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

হাসান জানান, বিমানবন্দরের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র ও জাতিসংঘের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। কিন্তু নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না কি করব। আমাকে পরামর্শ দেওয়ার মতো কেউ নেই। আমার সত্যিই সাহায্য দরকার। কারণ আমার মনে হচ্ছে, আরও খারাপ পরিস্থিতি সামনে অপেক্ষা করছে।’

সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধে কখনোই অংশ নিতে চাননি জানিয়ে হাসান বলেন, ‘আমি নিজের হাতে রক্ত দেখতে চাইনি। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেই যুদ্ধের মূল্যই দিতে হচ্ছে আমাকে।’

এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, হাসান আল-কোনতারের বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত আছে এবং এর সমাধানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।