লন্ডনের চার কাউন্সিলে ৫০ বাঙালি নির্বাচিত

যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এবারও অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন। কেবল পূর্ব লন্ডনের চারটি কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছেন ৫০ জন বাংলাদেশি। অন্য কাউন্সিলগুলোতেও বাঙালি প্রার্থীদের বিজয়ের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের এমন ফলাফল যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে বাঙালিদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিকে নির্দেশ করছে।

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডে ১৫০টি কাউন্সিলের ৪ হাজার ৩০টি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনকে ঘিরে পূর্ব লন্ডনের কাউন্সিলগুলোই সাধারণত বাংলাদেশিদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে। এসব কাউন্সিলে বাঙালি ভোটার যেমন বেশি, বাঙালিদের প্রার্থী হওয়ার হিড়িকও বেশি। ফলাফলেও বাঙালি ভোটের প্রভাব থাকে স্পষ্ট।

এবার পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস, নিউহাম, রেড ব্রিজ এবং বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহাম—এই চার কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছেন ৫০ জন বাঙালি কাউন্সিলর। এর মধ্যে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাচিত ৪৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। পার্শ্ববর্তী নিউহ্যাম কাউন্সিলে ১০ জন, রেডব্রিজ কাউন্সিলে ৮ জন এবং বাকিং অ্যান্ড ডেগেনহাম কাউন্সিলে ৬ জন বাঙালি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া লন্ডনের কেমডেন কাউন্সিলে ৪ জন এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের শহর সুইনডনে ২ জন বাঙালি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। লন্ডনের ব্রেন্ট, ক্রয়ডন, হ্যাকনিসহ বিভিন্ন কাউন্সিলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীর বিজয়ের খবর পাওয়া গেছে।

যুক্তরাজ্যের বাঙালিরা সাধারণত লেবার দলের সমর্থক। ফলে লেবার দল থেকে বাঙালি প্রার্থী মনোনয়নের হারও বেশি। নির্বাচিত কাউন্সিলরদের প্রায় সবাই লেবার দলীয় রাজনীতিক।

এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি চমকে দিয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটসের ফলাফল। ২০১০ সাল থেকে এখানকার রাজনীতি মূলধারার লেবার পার্টি বনাম বাঙালিতে বিভক্ত। এ নিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের বাঙালিরা মূলধারা থেকে ছিটকে গেছে বলেও অভিযোগ ছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ভোটাররা বাঙালি সেই স্বতন্ত্র গ্রুপটিকে পুরোদমে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফুর রহমান লেবার পার্টি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে ওই বিভক্তির সৃষ্টি হয়। লুৎফুর ২০১০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আবার নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, প্রচারণায় ধর্মের ব্যবহার এবং কাউন্সিল পরিচালনায় নানা অনিয়মের অভিযোগে তিনি আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কয়েক মাসের মাথায় বিদায় নেন। তাঁকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সাত বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেন আদালত।

কিন্তু লুৎফুর রহমান তাঁর স্বতন্ত্র দলের ব্যানারে প্রার্থী দাঁড় করান। এতে জিইয়ে থাকে বিভক্তি। এবারও তিনি ‘অ্যাসপায়ার’ দলের ব্যানারে মেয়র পদের পাশাপাশি ৪৫টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেন। তাঁর দলের কোনো প্রার্থীই এবার বিজয় পাননি। ফলে এত দিন তাঁর দলের নিয়ন্ত্রণে থাকা ১৮টি কাউন্সিলর পদের সব কটিই হারিয়েছেন তিনি।

বিপরীতে লেবারদলীয় মেয়র প্রার্থী জন বিগস বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন। ৪৫টি কাউন্সিলর পদের মধ্যে ৪২টিতেই জয় পেয়েছে দলটি। বিশেষ করে বাংলাদেশি ভোটারদের সমর্থনের কারণেই লেবারের এমন ভূমিধস বিজয়।

যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার নিজের আওতাধীন এলাকার শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা, ব্যবসার লাইসেন্স প্রদানসহ যাবতীয় কাজের পরিচালনা করে। প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন। একজন মেয়র বা লিডারের নেতৃত্বে কাউন্সিল মন্ত্রিসভা স্থানীয় সরকার পরিচালনা করে। আছে খুদে সংসদও। নির্বাচিত কাউন্সিলররা সেখানে বিতর্ক করেন, সিদ্ধান্ত নেন এবং ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি করেন।